সোমনাথ বাবুর সঙ্গে হাওয়াইয়ান গিটারের সম্পর্ক চল্লিশ বছরেরও বেশি। একটা সময় জনপ্রিয়তায় এই বাদ্যযন্ত্র অন্যান্য সমগোত্রীয় বাদ্যযন্ত্রের কাছে পিছিয়ে পড়ছিল। তবে ইন্টারনেট প্রযুক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এই বাদ্যযন্ত্র তার হারিয়ে যাওয়া গৌরব কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে। আর হাওয়াইয়ান গিটারকে হারিয়ে যেতে না দেওয়ার লড়াইতে, সোমনাথ বাবু একজন প্রথম শ্রেণীর যোদ্ধা। হাওয়াইয়ান গীটার নামক এই ৬ তারের বাদ্যযন্ত্রটি পৃথিবীতে একমাত্র বাদ্যযন্ত্র যাতে ওয়েস্টার্ন, ক্লাসিক্যাল ও সেমিক্লাসিক্যাল লঘুসঙ্গীত সবধরণের সংগীতকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা যায়।
সোমনাথ বাবুর জন্ম কলকাতায়, ১৯৬৬ সালে। বাবা শ্রী রবীন্দ্রনাথ দাস ও মা শ্রীমতি মনিমালা দাস। ১৯৮৭, ১৯৮৮ ও ১৯৯০ এই তিন বছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসংগীত একাডেমির তথ্য ও সংষ্কৃতি বিভাগ দ্বারা পরিচালিত সারা বাংলা সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথমবার তৃতীয় ও পরের দুবছর প্রথম স্থান অধিকার করেন। দূরদর্শন ও বেতার শিল্পীর মর্য্যাদা লাভ করেন ১৯৯০ সালে । ১৯৯৫ সালে B-high শিল্পীর মর্য্যাদা লাভ করেন। সোমনাথ বাবু দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে কলকাতা সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠান করেছেন।
মিউজিকের প্রতি আগ্রহ কার অনুপ্রেরণায়?
“জন্ম থেকেই গানবাজনার পরিবেশ পেয়েছি। আমার মা খুব ভালো গান গাইতেন, দাদা তবলা বাজাতেন, দিদি গান করতেন আর বাবা অত্যন্ত সংগীতপ্রেমী মানুষ ছিলেন। বাড়িতে অসংখ্য রেকর্ড ছিল। গান শুনতে শুনতেই বেড়ে ওঠা। বাড়িতে প্রতি শনিবার করে গানের আসর বসতো। বহু প্রবাদপ্রতিম গিটার শিল্পী যেমন সুনীল গাঙ্গুলী, বটুক নন্দী, কাজী অনিরুদ্ধ, রজত নন্দী , জগন্নাথ ধর প্রমুখ এনাদের রেকর্ড শুনতে শুনতে গিটার যন্ত্রটির ওপর প্রগাঢ় ভালোবাসা জন্মায়। আমার পরিবারের বেশিরভাগ মানুষই সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্য। আমার মেয়ে নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যসঞ্চালক। আমার ছোটমামা তালবাদ্যে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। আমাকে বিশেষ ভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রানিত করেছেন।”
গিটারের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কত বছরের?
“১৯৭৭ সাল থেকে। আমার যখন ১১ বছর বয়েস তখন থেকে আমি গিটার শিখতে শুরু করি। আমার প্রথম গুরু ছিলেন শ্রী বিজন কর। ওনার কাছে ওয়েস্টার্ন সংগীত শেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। ওনার শারীরিক অসুস্থতার কারণে বছর তিনেক পর, আমার দ্বিতীয় গুরু শ্রী দ্বিজদাস ঘোষের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করি। দীর্ঘ ৮ বছর আমি ওনার কাছে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি ও বিভিন্ন লঘু সংগীতের পাশাপাশি ক্লাসিকালের তালিম নিয়েছি। সংগীত বিশারদ পাশ করার পর, ১৯৮৭ সালে কলেজে পড়াকালীন আমি প্রবাদ প্রতিম গিটার বাদক শ্রী সুনীল গাঙ্গুলী মহাশয়ের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করি। ওনার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত (১৯৯৯) অর্থাৎ দীর্ঘ ১২বছর আমি ওনার কাছে পুত্রসম স্নেহ পেয়েছি ও শিক্ষা লাভ করেছি।”
হাওয়াইয়ান গিটার বেছে নিলেন কেন?
“আমার হাওয়াইন গীটার কে বেছে নেবার কারণ এটা lead instrument. এই যন্ত্রের দ্বারা মানুষের কাছে শিল্পী হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি লাভ করা যায়। যা প্রত্যেক শিল্পীর সুপ্ত চাহিদা। এর চেয়ে সুন্দর ও সুরেলা বাদ্যযন্ত্র খুব কম আছে। একে singing instrument ও বলা হয়।”
শুনেছি একসময় হাওয়াইয়ান গিটারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ কমে যাচ্ছিল। কিভাবে ফিরিয়ে আনলেন হাওয়াইয়ান গিটারের জনপ্রিয়তা?
“আমরা হাওয়াইয়ান গিটারিস্টরা সম্মিলিত ভাবে সংগীতের সবকটি স্ত্বরকে আমাদের বাজনার মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরার মাধ্যমে এই যন্ত্রের হারিয়ে যাওয়া গৌরবকে আবার ফিরিয়ে এনেছি। গীটার শিল্পীরা আবার সর্বত্র আমন্ত্রিত ও সম্মানিত হচ্ছে। যা আমাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে আবার হাওয়াইয়ান গিটার শুনতে পাওয়ার ফলে নতুন প্রজন্ম এই যন্ত্রকে আবার হাতে তুলে নিচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছেএই যন্ত্রের প্রতি নতুন করে আকর্ষণ তৈরি করার পিছনে সোশ্যাল মিডিয়ার বিশেষ ভূমিকা আছে।”
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই হাওয়াইয়ান গিটার ফিরে পেয়েছে তার হারানো গৌরব
“বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামের দৌলতে ভারতের বাইরেও পরিচিতি ঘটেছে। আজ আমেরিকা , ইংল্যান্ড বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়রা অনলাইনের মাধ্যমে আমার কাছে হাওয়াইন গীটার শিক্ষা লাভ করে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আমার কাছে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে। এছাড়াও সরাসরি বহু ছাত্রছাত্রী আমার কাছে গীটার শিক্ষা গ্রহন করতে আসে।”
২০২২ এ কোথায় কোথায় যাচ্ছেন অনুষ্ঠান করতে?
আগামী কয়েকমাস পুনে, দিল্লি ও ওরাঙ্গাবাদ অনুষ্ঠান করতে যাবো। আমার গুণগ্রাহী শ্রোতাদের ভালোবাসা ও উৎসাহ আমার বেঁচে থাকার রসদ। সকল শ্রোতাদের আমার আন্তরিক প্রনাম রইলো।