বারবার বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া এক কালো মেয়ের গল্প লিখেছেন বাংলাদেশের রংপুর জেলার কামাল কাছনা থেকে অর্পিতা ঐশ্বর্য

Black Indian Woman Artwork
সত্যই কি কালো মেয়েদের কেউ পছন্দ করে না? কেউ না? কোন ছেলেই কি কালো মেয়ে পছন্দ করেনা? হয়তো কেউ কেউ করে। তবে কালো মেয়ে দেখলে বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়ে যায় এমন ছেলে আমাদের সমাজে বিরল। তবে তারা আছে। সংখ্যায় যতই কম হোক। আমাদের প্রধান সম্পাদকের ভাষায়, “সংখ্যাতত্ত্বে কি যায় আসে, দলে তুমি যতই ভারি হও।” পড়ুন অনুগল্প “কালো মেয়ে”

Share This Post

“কালো মেয়ে”

হঠাৎ সেদিন কলেজ থেকে বাসায় আসতেই অহনা জানতে পারল, আজ আবার ছেলের বাসা থেকে  তাকে দেখতে আসবে। অহনার গায়ের রঙটা একটু বেশিই  চাপা। সোজা কথায় কালো। কালো বলেই কোন ছেলে তার সাথে কখনো বন্ধুত্ব করেনি। কেউ কখনও প্রেম নিবেদন করেনি। তাই তার কখনো প্রেম করা হয়নি। অহনা মাঝে মাঝে ভাবে, কালো মেয়েদের সঙ্গে কি প্রেম করা বারণ। 

 

সেদিন কলেজ থেকে এসেই অহনা সোজা রুমে চলে গেল। অহনার মা বলল, “আজকে একটু বেশি করে মেকআপ দিয়ে সেজে গুজে ওদের সামনে যাস।” 

অহনা কিছু না বলে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে খুব জোড়ে একটা নিশ্বাস ফেলল। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে।

কিছুক্ষন পরেই অহনার মা এসে তাড়া দিতে লাগল, “কিরে এখনো হয়নি? ওরা এসে গেলো বলে। তাড়াতাড়ি  কর।” 

অহনা আয়নার সামনে দাড়িয়ে তাকিয়ে ভাবতে লাগল, কি হবে গিয়ে। সেই তো গায়ের রঙ দেখেই না বলে দিবে। মায়ের কথা মত চড়া মেকআপ দিয়ে নিজেকে দেখতে কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। সে তাড়াতাড়ি মেকআপ তুলে, চোখে কাজল, ঠোটে হালকা  লিপস্টিক, কপালে ছোট্ট একটা টিপ পরে নিল।

“কেমন লাগছে আমাকে?” নিজেই নিজেকেই প্রশ্ন করে।

ভিতর কে যেন বলে উঠল, “ইসস কি কালো!”

এর পরের ঘটনা জানা কথা। ছেলে পক্ষ গোমড়া মুখে মিষ্টি জল খাবার গিলবে। তারপর ছেলের মা কিংবা মাসি কেউ বলে উঠবে, “আমরা তো আগেই বলেছিলাম, কালো মেয়ে চলবে না।”

যারা একটু ভদ্র, তারা বলবে, “আজ উঠি। ফোন দিয়ে জানাব।”

কতবার এমন হয়েছে? অহনার মনে পড়েনা।    

একদিন ওর বাবা হতাশ হয়ে বলেছিল,  “আগে যদি জানতাম, মেয়ের বিয়ে দিতে পারবনা, গলা টিপেই মেরে দিতাম।”

খুব কেঁদেছিলো সেদিন  দরজা বন্ধ করে।

একবার ভেবেছিলো  মরেই যাবে। গলায় দড়ি দিয়ে।  নয়তো হাতের শিরা কেটে। কিন্তু মরে যাওয়া খুব কষ্ট। 

ছেলে পক্ষ অপেক্ষা করছে। ইচ্ছে না থাকলেও যেতে হবে। খুব রাগ হচ্ছিল নিজের উপর। ইচ্ছে করছিলনা যেতে। তবু যেতে হল।

 

সেদিনের কথা অহনার মাঝে মাঝেই মনে পড়ে। বিশেষ করে যখন সোহম আদর করে গেয়ে ওঠে, “তা সে যতই কালো হোক, আমি দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।”

 

সেদিন সব হিসেব ওলট পালট করে সোহম বলেছিল, “মেয়ে আমার পছন্দ হইছে।” ছেলে মেয়ে সব পক্ষই তখন অপ্রস্তুত। অহনা মাঝে মাঝে ভাবে সব কালো মেয়েদের জীবন যদি এমন হতো তাহলে কতোই না ভালো হতো।

Copyright @ Orpita Oyshorjo

Author

  • অর্পিতা ঐশ্বর্য

    উদীয়মান কবি অর্পিতা ঐশ্বর্যের জন্ম : ২৩ নভেম্বর ২০০১ সালে রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার অনন্তরাম গ্রামে। বর্তমানে তিনি রংপুর জেলার কামাল কাছনায় থাকেন। নিয়মিত ভাবে বিভিন্ন দেশ বিদেশের পএ - পএিকা ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল সাইটে তার লেখা ছাপা হয় এবং স্টোরিমিররে মাএ ২০ বছর বয়সে তিনি " সাহিত্যের অধিনায়ক " পদক পেয়েছেন । তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “কবিতার রংধনু”।

    View all posts

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore