ভাল গল্প লেখার জন্য সবার আগে প্রয়োজন সৃজনশীলতা। অণুগল্পের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। যেহেতু অণুগল্পের আকার সীমিত রাখার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে, এখানে খুব বেশি বর্ণনার সুযোগ থাকেনা। তাই ভাল অণুগল্প লেখা অত্যন্ত কঠিন। অণুগল্প ছোট হলেও গল্প। কবিতার সঙ্গে অণুগল্পের আকারে মিল থাকলেও চরিত্রে এর মিল বেশি গল্পের সঙ্গে। অণুগল্প লেখার জন্য ফার্স্ট পারসন ন্যারেটিভ বা লেখকের প্রত্যক্ষ বর্ণনা ব্যাবহার করার কথা বলা হয়। তবে এটা কোন সর্বজনীন নিয়ম নয়। দেখতে হবে গল্পের প্লটের সঙ্গে কি ধরনের পয়েন্ট অফ ভিউ মানানসই হচ্ছে। প্রথমে “টান” অণুগল্পটা লিখেছিলাম ‘তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি’ বা ‘থার্ড পার্সন ন্যারেটিভ’ ব্যবহার করে। তারপর গল্পটাকে ‘ফার্স্ট পার্সন’ এবং ‘সেকেন্ড পার্সন’ সংলাপে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ন্যারেটিভ পয়েন্ট অফ ভিউ কিভাবে একটা গল্পের খোলনলচে বদলে দিতে পারে এটা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
অণুগল্প “টান” | লিখেছেন কলকাতা থেকে তৃষা ঘোষ।
টান (ফার্স্ট পারসন ন্যারেটিভ):
একদিন ১০২ জ্বরে আমার সারা রাত জ্ঞান ছিল না। তুমি বসে জলপট্টি দিচ্ছিলে। সেদিন রাতে জ্বরের ঘোরে আমি অনেক কথা বলেছিলাম। তুমি কিছুই বুঝতে পারোনি। বোঝার চেষ্টাও করনি। কারণ তোমার পুরো ধ্যানটাই ছিল আমার দিকে। তোমার তখন একটাই চিন্তা। কখন আমি সুস্থ হয়ে উঠব।
এভাবেই তো বিয়ের পর অনেকগুলো বছর আমরা একসাথে কাটিয়েছি। তুমি, আমি অন্ত প্রাণ। এতটাই ভালোবাসো, এতটাই খেয়াল রাখো, এতটাই যত্ন করো, যে আমার অভিযোগের কোন জায়গাই রাখোনি। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, কতজন্ম পুন্য করলে তোমার মত একজন মানুষ, জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া যায়। সত্যিই কি আমি তোমায় ডিজার্ভ করি?
আমার গোটা জীবনটাই তো ভুলে ভরা, ছন্নছাড়া। তোমার মত এত ভালবাসতে মনে হয়, আমি কোনদিনও পারবো না। তাও তো, তুমি কোনদিনও কোন অভিযোগ করো নি। তোমার কথা বলতে হলে মনে হয় একটা গোটা উপন্যাসও কম পড়বে। কি করে একজন মানুষ তোমার মত, এত দায়িত্ববান, এত পরিণত হতে পারে? আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি তোমার দিকে। ঠিক যেভাবে পাহাড় দেখি মুগ্ধ নয়নে। দূর থেকে। যাকে শুধুই দেখা যায়। দেখে বিস্ময় হওয়া যায়। কিন্তু ছোঁয়া যায় না। ঠিক সেভাবে।
কিন্তু আমি যে পাহাড় ভালোবাসিনা। আমি ভালোবাসি সমুদ্র। পাহাড় যে দূর থেকেই শুধু সুন্দর লাগে। তাকে গায়ে মাখা যায় না। কিন্তু সমুদ্র গায়ের উপর আছড়ে পড়ে নিজের করে কাছে টেনে নেয়। সমুদ্রের সেই টানটা আমি ভীষণ ভালোবাসি। হ্যাঁ! ভীষণ ভালোবাসি। ভীষণ কাছের আমার সেই টান।
টান (থার্ড পার্সন ন্যারেটিভ):
একদিন ১০২ জ্বরে কূহূর সারারাত জ্ঞান ছিলোনা। মেঘ বসে জল-পট্টি দিচ্ছিলো। সেদিন রাতে জ্বরের ঘোরে কুহূ অনেক কথাই বলেছিলো। মেঘ কিছুই বুঝতে পারেনি। বোঝার চেষ্টাও করেনি। কারণ মেঘের পুরো ধ্যানটাই ছিলো কূহূর দিকে। একটাই চিন্তা মেঘের। কখন সুস্থ হয়ে উঠবে সে।
এভাবেই বিয়ের পর অনেক গুলো বছর ওরা একসাথে কাটিয়েছে। মেঘ কূহূ অন্ত প্রাণ। এতটাই ভালোবাসে, এতটাই খেয়াল রাখে, এতটাই যত্ন করে, যে কূহূর অভিযোগের কোনো জায়গাই রাখে নি। কূহূ মাঝে মাঝে ভাবে, কত জন্ম পুন্য করলে মেঘের মতো একজন মানুষ জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া যায়। সত্যি কি কূহূ মেঘকে ডিজার্ভ করে?
কূহূর গোটা জীবনটাই তো ভুলে ভরা, ছন্নছাড়া। মেঘের মতো এতো ভালোবাসতে মনে হয় কূহূ কোনোদিনও পারবেনা। তাও কোনো অভিযোগ মেঘ কোনোদিন করেনি। মেঘের নামে বলতে বসলে কূহূর মনে হয় একটা গোটা উপন্যাসও কম পড়বে। কি করে একজন মানুষ এত দায়িত্ববান, এত পরিণত হতে পারে? কূহূ, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মেঘের দিকে। ঠিক যেভাবে পাহাড় দেখে মুগ্ধ নয়নে। দূর থেকে। যাকে শুধুই দেখা যায়। দেখে বিস্ময় হওয়া যায়। কিন্তু ছোঁয়া যায় না। ঠিক সেভাবে।
কিন্তু কূহূ যে পাহাড় ভালোবাসে না। ভালোবাসে সমুদ্র। পাহাড় দূর থেকেই শুধু সুন্দর লাগে। তাকে গায়ে মাখা যায় না। ঠিক যেভাবে হঠাৎ করে গায়ে আছড়ে পড়ে ঢেউ। নিজের করে কাছে টেনে নেয়। সমুদ্রের সেই টানটা সে ভালোবাসে। হ্যাঁ! ভীষণ ভালোবাসে। ভীষণ কাছের সেই টান।
তৃষা