অণুগল্প: ‘একাকিত্ব’
“শাওন রাতে যদি, স্মরণে আসে মনে”, জানলার ধারে বসে শুনতে পায় মিঠি, গানের সুর ভেসে আসছে হালকা হয়ে। আসলে অনবরত বৃষ্টি হওয়ায় গানের সুরটা হালকা হয়ে মিঠির কানে আসছে।
‘কেউ হয়তো গাইছে’, নিজের মনেই বলে ওঠে মিঠি। জানলার পাশে বসে বৃষ্টির ছাঁট উপভোগ করতে করতে হাতটা বাড়িয়ে দেয় জানলার বাইরে, বৃষ্টির জল ছোঁয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু বৃষ্টিকে স্পর্শ করতে পারেনা। বাধ্য হয়েই হাতটা সরিয়ে নিয়ে আসে।
বৃষ্টির জল, যেটা অনবরত তার মুখে এসে পড়ছে, সেটাকেই দুহাতে ছুঁয়ে বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চাইছে।
আসলে মিঠি বরাবরই খুব রোমান্টিক। একটা সময় ছিল যখন সে কবিতা লিখত, আবৃত্তি করত ভীষণ ভালো। কিন্তু আজ সেসব অতীত। একাকিত্ব গ্রাস করেছে তার জীবন। এই জানলার ধার আর এই অসময়ের বৃষ্টি তার একাকিত্বের সঙ্গী।
সুকোমলের কথা মনে পড়লে কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়ে মিঠি। চোখের কোনে একফোঁটা জল চিকচিক করে ওঠে। মিঠি মুছে নেয় সেটা। আসলে মা বাবা সবাই বারণ করেছে সুকোমল এর কথা মনে করতে। ভুলে যেতে হবে সুকোমল এর কথা।
আর মনে রেখেই বা কি করবে সে?
সুকোমল আজ মিঠির জীবনে নেই। তবু কি মন বোঝে সে কথা?
বাইরে তখনও অনবরত বৃষ্টি হয়ে চলেছে।
মিঠির মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। সুকোমল এর সাথে তার প্রথম পরিচয়। একটা অনুষ্ঠানে। কলেজের অ্যানুয়ালডের দিন।
“শেষের কবিতা” -র লাবণ্য আর অমিত যেন মঞ্চের মিঠি আর সুকোমল। হাততালির আওয়াজ আজও মিঠির কানে বাজে।
এরপর তাদের বন্ধুত্বটা ভালোবাসার রূপ নেয়। দুজনের পছন্দ অপছন্দের মাত্রা প্রকাশ পায়। আসতে আসতে দুজনেই দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
মিঠি এর আজও মনে পড়ে বৃষ্টিভেজা দিনগুলোর কথা। সুকোমলের সাথে একসাথে বৃষ্টির মজা নেওয়া । কিভাবে ভুলে যাবে সেইসব স্মৃতি।
আজও মনে পড়ে সেই দিনকার ঘটনা। সুকোমল বাইক চালাচ্ছে আর পিছনে বসে মিঠি। বাইকের স্পিড বাড়ছে আর মিঠির অনুরোধ প্লিজ সুকোমল একটু আস্তে চলো, দোহাই তোমার একটু আস্তে চলো।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। স্পিড তখন তার ৮০ এর কাছে, আর তারপরেই..
“মিঠি”
“যাই, মা”, খাটের পাশে থাকা লাঠিটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে।
আসলে সুকোমল তার জীবনের সব আলো কেড়ে নিয়ে, তার জীবনকে অন্ধকারে সাজিয়ে, সুদূরে পাড়ি দিয়েছে না ফেরার দেশে।
“যে রাতে মোর, দুয়ারগুলি, ভাঙলো ঝড়ে”। গানের কথাগুলো ভেসে আসে মিঠি এর কানে ।
দরজার দিকে এগিয়ে চলে সে।