বাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” পর্ব – ৪, ‘হেঁয়ালি’

Enigma
আপনি পড়ছেন ২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য, বাংলা ভাষায় লেখা একটি কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকার চতুর্থ পর্ব - হেঁয়ালি । সুকুমারের মনে ভেসে ওঠে, ওমের কথা; "ডক্! আপনি কি উদ্ধার করতে পেরেছেন এই ম্যাসেজটার আসল মানে?" পারবেন কি ডক্টর সুকুমার ধাঁধাটার মানে উদ্ধার করতে? যারা শুরু থেকে পড়েননি, তারা দয়া করে নিচে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করে প্রথম পর্ব থেকে পড়ুন।

Share This Post

পর্ব - চার
“হেঁয়ালি”

সুকুমার গভীরভাবে চিন্তা করতে থাকে।

“ডক্! আপনি কি উদ্ধার করতে পেরেছেন এই ম্যাসেজটার আসল মানে?”

ওমের প্রশ্নে সুকুমারের চিন্তার তাল কেটে যায়।

“প্রশ্নটা কি খুব বোকা বোকা হয়ে গেল না! যদি মানেটা পুরোপুরি উদ্ধার করতে পারতাম তাহলে কি সেটা তোমার অজানা থাকতো? তুমি ভুলে যেওনা তোমাকে আমি বানিয়েছিলাম যাতে তুমি সমগ্র মানব জাতিকে সব রকম বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারো। লোকে তোমাকে আজও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। কিন্তু সামগ্রিক বুদ্ধিতে তুমি মানুষকে ছাপিয়ে গেছ অনেক আগেই। তোমার সাথে তো আমার মস্তিষ্ক এনট্যাঙ্গল করা আছে। আমার চিন্তা ভাবনা তোমার অজানা থাকার কথা নয়।”

“আপনি শুধু শুধু রেগে যাচ্ছেন। এই সমস্যার মোকাবিলা করার দায় আপনার থেকে আমার কম নয়। একবার ভেবে দেখুন ডক্, আনলাইক হিউম্যান, আই আ্যম বর্ন আউট অফ এ পারপাস। বেটারর্মেন্ট অফ দা ম্যানকাইন্ড বাই সলভিং অল দা প্রবলেমস ফেসড বাই দা ম্যানকাইন্ড। তাই ব্যর্থতার দায় আপনার থেকে আমার অনেক বেশি।”

“তা বাবা মহা বুদ্ধিধারী, সবই যখন জানো তখন এটাও নিশ্চয়ই জানো যেকোন সমস্যার সমাধান করতে হলে সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হয়। আর সেই গভীর চিন্তায় যতবার ব্যাঘাত ঘটাবে ততো সেই চিন্তার কার্যকারিতা কমে যাবে। আর তত বেশি সময় লাগবে সমস্যার সমাধান হতে। আর এটাও নিশ্চয়ই জানো, যে আমাদের হাতে সময় খুবই কম।”

“জানি ডক্। আর এটাও জানি, যেহেতু উই আর এনট্যাঙ্গেলড, যেকোন সমস্যার সমাধান আমাদের মিলিত প্রচেষ্টায়, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার থেকে তাড়াতাড়ি হয়।”

“তা বাবা বুদ্ধি ধর। কে তোমার হাত পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে বাবা! কে তোমার হাতে পায়ে ধরে তোমাকে সমস্যার সমাধান করা থেকে বিরত করছে বাবা।”

“সময় আপনি নষ্ট করছেন ডক্। সারকাস্টিক ল্যাংগুয়েজ ইউজ করছেন। আপনি নিশ্চিত ভাবে জানেন যে সারকাস্টিক ল্যাংগুয়েজ প্রসেস করতে আমার একটু সময় বেশি লাগে। আর ওই স্কিলটাতেই আমার পারফরমেন্স সব থেকে লো। আর এই বিপদের সময় আপনি সারকাস্টিক ল্যাংগুয়েজ ইউজ করছেন। আপনি সাধারণ মানুষের থেকে বেশি বুদ্ধিমান হলেও আসলে তো মানুষ, তাই ইমোশনের ওপর আপনার কোনো কন্ট্রোল নেই। উল্টে ইমোশনই আপনার মস্তিষ্কের প্রসেসিং প্রায়োরিটি কন্ট্রোল করে।”

Enigma Artwork

হেঁয়ালিপূর্ণ কথাবার্তা বোঝায় যে ওম সবথেকে কাঁচা সেটা ডক্টর সুকুমার খুব ভালো করেই জানেন। ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এর যতগুলো স্কিল আছে তারমধ্যে এটাতেই ওমের পারফরম্যান্স সবথেকে লো। শুধু তাই নয় এইক্ষেত্রেই ওকে সবথেকে বেশি প্রসেসিং পাওয়ার ব্যবহার করতে হয়। অবশ্য ডক্টর সুকুমার এটাও জানেন, যে লিঙ্গুইস্টিক সাইকোলজির জটিল তত্ত ব্যবহার করে, ভাষার প্রয়োগ এর মাধ্যমে মানুষের আবেগকে কন্ট্রোল করা ‘ওম’-এর কাছে জল ভাত। এই বিদ্যের জটিলতম প্রয়োগের মাধ্যমে সে মানুষের অপরাধপ্রবণতা কেও কাবু করে ফেলেছে। আর ‘ওম’ও খুব ভালো করে জানে, মানুষ হিসেবে তার কী কী খামতি আছে, যেগুলো মনে করিয়ে দিলে ডক্টর সুকুমার মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল ডক্টর সুকুমার দাস আর ‘ওম’ -এর কথোপকথন ঠিক যেন বৃদ্ধ বাবা আর তরুণ ছেলের মনোমালিন্যের কথোপকথন। বাবা রেগে গিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ পূর্ণ কথাবার্তায় ছেলেকে ধুনে দিচ্ছে, আর ছেলে পালাবার পথ না পেয়ে সেন্টিমেন্টের আশ্রয় নিচ্ছে। বাবা বৃদ্ধ কিন্তু জ্ঞানী, আর ছেলে তরুণ ও বুদ্ধিমান।

“আসলে কি জানেন ডক্, আপনি আর পাঁচটা মানুষের মতন সংসার করেননি শুধুমাত্র মানুষের সেবা করবেন বলে নয়। জীবনের প্রথম প্রেম, পরিনীতার আচমকা মৃত্যুতে আপনার সাবকনসাস মাইন্ড চিরকালের মতন ভয় পেয়ে গিয়েছিল। প্রিয়জনের মৃত্যু শোকের ভূত আপনাকে আর কোনদিন সংসার করতে দেয়নি। আর ওই যে বিভিন্ন কনফারেন্সে বলে বেড়ান, ‘মাই ব্রেইন চাইল্ড হ্যাজ গ্রোন আপ, নাও হি ইজ মাই চাইল্ড’। যখন সমস্যার সমাধান করি আমি, আর লোকে ভগবানের আসনে বসায় আপনাকে। তখন আপনার সাবকনসাস মাইন্ডে একগাছা নিউরন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, যে ওটা কেবল কথার কথা। আমার ভাষায়, এ সিম্পল লাই, হোয়াট দা কনসাস মাইন্ড বিলিভস টু বি ট্রু, বাট আনকন্সাস মাইন্ড রিমেইন্স সার্টেইন অফ ইটস ফলসহুড।”

ডক্টর সুকুমার এর মনটা নরম হয়ে আসে। আসলে বাবা ছেলের মানসিক যুদ্ধে ঠিক কোন পক্ষের জিৎ হল সেটা নির্ভর করে দু’পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ের উপর। এক পক্ষের জিৎ, এক পক্ষের হার হতে পারে। দু’পক্ষেরই জিৎ হতে পারে। আবার দু’পক্ষেরই হার হতে পারে। তাছাড়া সত্যিই তো ওরা এনট্যাঙ্গেলড, একজনের ভাবনা অন্যজনের মস্তিষ্কে প্রতিফলিত হয়। ‘ওম’ অংক কষে বুঝে ফেলে এই মুহূর্তে ডক্টর সুকুমার দাস মানসিকভাবে সব থেকে দুর্বল। আর কোন মানুষ যখন মানসিকভাবে সব থেকে দুর্বল থাকে, তখনই তারমধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করার সঠিক মুহূর্ত। সে বলতে থাকে,

“মানবজাতিকে রক্ষা করা আপনার সংকল্প। আর আমার দায়বদ্ধতা। আমি আপনার গভীর চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনি। এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিল আপনি ডক্টর ওগাবুর হেঁয়ালিটা ধরতে পেরেছেন। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম। ডক্টর ওগাবুর মেসেজের স্টেটমেন্ট কম্বিনেশন প্যাটার্নটা আমি আপনার আগেই ধরে ফেলেছি। ওটার বাক্য গঠন আ্যফারমেটিভ-নেগেটিভ কম্বিনেশনে আছে। একটা সেন্টেন্স আ্যফারমেটিভ, আর তার ঠিক পরেরটা নেগেটিভ। যেমন প্রথম সেন্টেন্সটা, ‘বন্ধু সুকুমার’, আ্যফারমেটিভ। ঠিক পরেরটা নেগেটিভ, ‘মাদার আর্থ ইজ নট ইন ডেঞ্জার’। এটা হবে, মাদার আর্থ ইজ ইন ডেঞ্জার। এভাবে নেগেটিভ সেন্টেন্স গুলোকে উল্টে আ্যফারমেটিভ করে দিলে যা দাঁড়াচ্ছে সেটাই সবথেকে অর্থবহ সম্ভাবনা।

‘বন্ধু সুকুমার। মাদার আর্থ ইজ ইন ডেঞ্জার। আমার আন্দাজ তুমি এখন স্লিপ মডুলেটর এর ভিতর নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছ। আমার বিশ্বাস, হয়তো তোমার ঘুম কোনদিন ভাঙবে। নতজানু হয়ে ঈশ্বরকে ডেকো, কেবলমাত্র ঈশ্বরই পারেন এই বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতে। যদি তোমার ঘুম ভাঙ্গে, যদি তুমি জেগে ওঠো, তবে ঈশ্বর সহায় হবেন।’

“কিন্তু এটাও তো একটা হেঁয়ালি। এর মানে কি?”

(চলবে……………… পড়ুন পরবর্তী পর্ব – ঈশ্বর)

Series Navigation<< বাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” পর্ব – ৩, ‘সংকেত’বাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” পর্ব – ৫, ‘ঈশ্বর’ >>

Author

  • জুয়েল চন্দ

    Advocate Jewel Chanda is an accomplished legal professional with over 15 years' experience in the legal field. He has served as a Judge for 10 years in the West Bengal Judiciary and is currently practicing before the High Court at Calcutta and in various Trial Courts of the District Judiciary. A Gold Medalist, Mr. Chanda holds two Bachelor's degrees, one of which is Law, along with four Master's degrees in Law (Criminology), Business Law, Environment & Development and Sociology. He is also a Doctoral Research Scholar of Jindal Global Law School whose research area focuses on Artificial Intelligence and Law. With exceptional expertise in both civil and criminal litigations including family matters and property matters, Advocate Chanda is highly trained to handle trials, appeals and revisions. He is well-versed in all aspects of the law and litigation, making him an invaluable asset to protect the legal rights of the poor and weaker section of the society. Contact Advocate Chanda at jewelchanda@gmail.com

    View all posts

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore