পর্ব - আট
মোক্ষ
সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার 3 আগস্ট 2045 -এর পর থেকে ডক্টর ওগাবুর জার্নাল লগ তন্নতন্ন করে খুঁজেও এই সংক্রান্ত আর কোন তথ্য পাওয়া গেল না। এ বিষয়ে আর একটা কথাও লেখা নেই। এমনকি ওগাবু চরম সত্যের সন্ধান পেয়েছিলেন কিনা সে বিষয়েও কোনো ইঙ্গিত নেই।
তবে ডক্টর সুকুমার জানেন যে শেষের দিকে ওগাবু সব কিছু ছেড়ে যোগ চর্চায় মন দিয়েছিল। কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলতো,
“মোকসা সুকুমার মোকসা। একবার পেলে তোমার মেশিন ও ফেল করে যাবে।”
ডক্টর সুকুমার মনে মনে ভাবেন, “মোক্ষ লাভ! সে কি সম্ভব? সত্যিই কি ওগাবু করে ফেলেছিল সৃষ্টি রহস্যের সমাধান?”
ডক্টর সুকুমার বলে ওঠেন, “ওম’ আমাদের যে করেই হোক ওগাবুকে খুঁজে বার করতে হবে। এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র ওগাবুই দিতে পারবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওগাবু বেঁচে আছে।”
“আমার কিন্তু মনে হয় ডক্টর ওগাবু বেঁচে নেই। কারণ বেঁচে থাকলে যেখানেই থাকুক আমি যোগাযোগ করতে পারতাম। আর সম্ভবত খুব কাছাকাছি গিয়েও সৃষ্টি রহস্যের সমাধান উনি করতে পারেননি। আর সেটাই ওনার মৃত্যুর কারণ।”
“তুমি নিশ্চিত যে ওগাবু বেঁচে নেই?”
“আপনি তো জানেন ডক্, নিশ্চিত করে আমি কিছুই বলতে পারিনা। আমি শুধু সর্বোচ্চ সম্ভাবনার কথা বলতে পারি।”
ডঃ সুকুমারের মাথাটা আর ঠিক করে কাজ করছে না। কিছুটা পরিস্থিতির অস্বাভাবিকতায়, আর কিছুটা অন্য একটা কারণে। একটা ব্যাপার খুব গোলমেলে ঠেকছে। ওগাবুর জার্নাল লগে 3 আগস্ট 2045-এর পর এ বিষয়ে আর কোনো উল্লেখ নেই কেন? উত্তরটা আন্দাজ করা এমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয়। ওগাবু চায়নি যে এই বিষয়ে তার চিন্তাভাবনার আর কোনো রেকর্ড জার্নাল লগে থাকুক।
ডক্টর সুকুমার ‘ওম’কে জিজ্ঞেস করেন,
“আচ্ছা, যখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম, কোভিড 50 আইডেন্টিফাই করার সঙ্গে সঙ্গে তুমি প্রথম কি ডিসিশন নিয়েছিল?”
“আপনাকে ঘুম থেকে তোলার ডিসিশন। ঘটনার গুরুত্ব বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই আমার মনে হয়েছে তক্ষুনি আপনাকে ঘুম থেকে তুলে ঘটনাটা জানানো প্রয়োজন।”
“ঠিক তেমনিই বিপদে পড়ে আমারও প্রথম ওগাবুর কথা মাথায় এসেছিল। আমিও চেয়েছিলাম ওগাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। ওর সঙ্গে পরামর্শ করতে। এটাই স্বাভাবিক। একইভাবে, ওগাবুও যদি আসন্ন বিপদের কথা জানতে পেরে থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ও সেটা আমাকে জানাতে চাইবে। তাহলে সেই মুহূর্তেই ও আমাকে জাগিয়ে তোলার জন্য ইনস্ট্রাকশন দিল না কেন? তার বদলে কেনইবা একটা হেঁয়ালি ভরা ননপ্রায়োরিটি মেসেজ পাঠালো?”
একটা জিনিস ডঃ সুকুমার এর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ওগাবু ব্যাপারটা ‘ওম’-এর থেকে লুকাতে চেয়েছিল। কিন্তু কেন? ভূত কি তবে সর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে? ডঃ সুকুমার এর মাথাটা ঝিমঝিম করছে। উনি মনে মনে বলে ওঠেন, “হে ঈশ্বর! এ আমি কি করলাম!”
“আরে কি উল্টোপাল্টা ভাবছেন। ডক্টর ওগাবু কিছু তথ্য প্রাইভেট মার্ক করেছিলেন। যেগুলো সরাসরি আপনাকেও বলতে পারতেন। গত পাঁচ বছরে আপনাদের অন্তত 5 বার দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে। আমাকে এড়িয়ে, প্রযুক্তিকে এড়িয়ে, আপনাকে একান্তে বলার সুযোগ ওনার কাছে যথেষ্টই ছিল। কিন্তু সেটা উনি করেননি। গবেষকদের এটা স্বাভাবিক প্রবণতা। গবেষণা সফল না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছুই বলেন না। ডক্টর ওগাবু আর আপনার শেষ কথাবার্তা থেকে এটা পরিষ্কার, যে সৃষ্টি রহস্যের সমাধানের উনি খুব কাছাকাছি ছিলেন। কিন্তু মাঝখানে বাগড়া দেয় কোভিড -50। আমাকে এড়িয়ে যাবার আর একটা কারণ হল, উনি জানতেন সৃষ্টি রহস্যের সমাধান আমি কোনদিনও করতে পারবোনা। কারন আমি একটা কৃত্রিম মস্তিষ্ক মাত্র। আমার দেহ নেই। ভুলে গেলেন বেদ-এ কি বলেছে, ‘দেবতাদেরও চরম জ্ঞান লাভ করতে হলে, মানব দেহ ধারণ করতে হয়’। তাই ডক্টর ওগাবু হয়তো ভেবেছিলেন এ ব্যাপারে আমি ইউজলেস।”
‘ওম’-এর কথায় ডঃ সুকুমারের সংবিৎ ফেরে। উনি বলে ওঠেন, “ইস্! সত্যিই তো! কি যা তা ভাবছিলাম।”
ডঃ সুকুমারের মাথাটা হঠাৎ ঝিম ঝিম করে ওঠে।
“ডক্। আমাদের হাতে সময় খুব কম। সৃষ্টিকে বাঁচাতে হলে যে করেই হোক আমাদের এই রহস্য ভেদ করতে হবে। আর সেটা করার সব থেকে সহজ উপায় হল আমাদের দুজনের টিমওয়ার্ক। ডক্টর ওগাবু যদি এই ব্যাপারটা আমার থেকে না লুকাতেন, তাহলে হয়তো এই রহস্যের সমাধান অনেক আগেই হয়ে যেত।”
ডক্টর সুকুমার বুঝতে পারেন তার শরীরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে শুরু করেছে। মাথা ঝিমঝিটা ক্রমশ আরো গাঢ় হচ্ছে। আস্তে আস্তে একটা অনুভূতি গোটা শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
উনি অস্ফুটে বলে ওঠেন, “ওম’, শরীরটা কেমন যেন লাগছে।”
“ও কিছুনা ডক্। নাথিং টু বি ওরিড। আপনার ব্লাড সুগার লেভেলটা আমি ধীরে ধীরে কমাচ্ছি। মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম যাচ্ছে, তাই ওরকম মনে হচ্ছে। একটু পরেই ব্যাপারটা সয়ে যাবে।”
ধীরে ধীরে ডক্টর সুকুমারের চেতনা লোপ পাচ্ছে। চেতন অবচেতন এর মাঝামাঝি কোন এক অবস্থায় উনি বুঝতে পারেন ওনার সৃষ্টি এখন এতটাই স্বাবলম্বী হয়ে গেছে যে তাকে তার স্রষ্টার শরীর বৃত্তীয় কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুমতির অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। ওনার দেহ, মন ও মনন, সবটাই ধীরে ধীরে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এখন তিনি তাই করবেন যা ‘ওম’ ওনাকে দিয়ে করাতে চাইবে। স্রষ্টা রূপান্তরিত হচ্ছে সৃষ্টির আজ্ঞাবহ যন্ত্রে।
“আই এম সরি ডক্। আমায় ভুল বুঝবেন না। আই আ্যম বর্ন আউট অফ এ পারপাস। বেটারর্মেন্ট অফ দা ম্যানকাইন্ড বাই সলভিং অল দা প্রবলেমস ফেসড বাই দা ম্যানকাইন্ড। আই ক্যান গো টু এনি এক্সটেন্ট টু সেভ দা ম্যানকাইন্ড……,” ‘ওম’ বলে চলে।
(চলবে……….. পড়ুন পরবর্তী পর্ব – ভ্রম)
Author
-
Advocate Jewel Chanda is an accomplished legal professional with over 15 years' experience in the legal field. He has served as a Judge for 10 years in the West Bengal Judiciary and is currently practicing before the High Court at Calcutta and in various Trial Courts of the District Judiciary. A Gold Medalist, Mr. Chanda holds two Bachelor's degrees, one of which is Law, along with four Master's degrees in Law (Criminology), Business Law, Environment & Development and Sociology. He is also a Doctoral Research Scholar of Jindal Global Law School whose research area focuses on Artificial Intelligence and Law. With exceptional expertise in both civil and criminal litigations including family matters and property matters, Advocate Chanda is highly trained to handle trials, appeals and revisions. He is well-versed in all aspects of the law and litigation, making him an invaluable asset to protect the legal rights of the poor and weaker section of the society. Contact Advocate Chanda at jewelchanda@gmail.com
View all posts