বাংলা ছোট গল্প: কোয়ান্টাম মেকানিক্স

Share This Post

আমাকে আমার অনেক পাঠক পাঠিকা অভিযোগ করেন, যে আমি বড্ড কম লিখি। প্রশ্নটা বেশিরভাগ সময় আমি সময়ের অভাব, আর কাজের চাপ বলে সামাল দিই। তবে স্বীকার করতে লজ্জা নেই, কল্পকাহিনী রচনায় আমার একটু দক্ষতার খামতি আছে। বানিয়ে বানিয়ে গল্প লেখার মতন প্রতিভা আমার নেই। তাই আমি গল্প খুঁজে বেড়াই। খুঁজে বেড়াই বলাটাও ভুল, আসলে মাঝে মাঝে আমি ভালো গল্প পেয়ে যাই। সেই গল্পগুলোই আমি আপনাদের বলি। তবে গল্পের ঘটনাক্রমে রুল-অফ-এথিকস মেনে একটু অদল-বদল ঘটাতে হয়। যাতে গল্পের আসল চরিত্রদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন না হয়। আবার অনেক সময় অনেক পাঠক বলেন, আমার গল্পের অনেক ঘটনা নাকি তাদের জানা বাস্তব জীবনের ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। আমি হলফ করে বলতে পারি, ওইটুকু মিল কিন্তু কাকতালীয়। কারণ আমি সত্য ঘটনা উপস্থাপন করি না। সত্য ঘটনা অবলম্বনে এমন একটা রচনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করি, যার স্থান, কাল, পাত্র এবং ঘটনা ক্রম সম্পূর্ণ কাল্পনিক।


আজকের গল্পটা কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক পাঠক পাঠিকাদের জন্য। সাহিত্যের খাতিরে যেমন অনেক কিছু বলতে হবে, তেমনি সাহিত্যের খাতিরেই অনেক কিছু বলা হয়ে উঠবে না। সম্পূর্ণটা বলতে না পারার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আজকের এই গল্পের প্রেক্ষাপটে রয়েছে উচ্চ মার্গের বিজ্ঞানের দুটি শাখা। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আর ডেটা সায়েন্স। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি, এমনভাবে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করার, যাতে সেটা যেকোন সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয়। আমার সর্বান্তকরণ চেষ্টা সত্ত্বেও, যদি কারোর বিষয়টা জটিল এবং নিরস লেগে থাকে, তাহলে আমি আবারও ক্ষমাপ্রার্থী।

যাই হোক, আসল গল্পে আসি।
নিজেকে এলিট গোত্রীয় মনে করার ক্ষমতাটা আমার সহজাত। এবং এই এলিট স্ট্যাটাসটা ধরে রাখার জন্য যা যা করণীয়, তা করতে আমি কোনোকালেই কার্পন্য করিনা। এর মধ্যে একটা হল, পঁচিশ তলা বিল্ডিং এর এই ছাদটা। এখানে যে সুইমিংপুলটা আছে তার গালভরা নাম হল ইনফিনিটি পুল। প্রতি শনিবার সন্ধ্যে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই জায়গাটা আমার ঠিকানা। না, মহিলা ঘটিত কোন ব্যাপার নেই। এই সময়টা আমার নিজের জন্য বরাদ্দ। আমার একার। সুইমিংপুল থেকে একটু দূরে আমার বসার জায়গাটা নির্দিষ্ট। বহু বছর ধরে প্রতি শনিবার আমি এইখানটাতেই বসি। বসতে বসতে এখন অনেকটা বাপের সম্পত্তির মত হয়ে গেছে। এখান থেকে পুরো জায়গাটার ভিউ পাওয়া যায়। তাই আমি চাইলেই, আমার চোখ দুটোকে এখানে উপস্থিত যেকোন মহিলার শরীরের ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তেমনটা আমি কখনো করিনি। আমি আমাতেই মগ্ন থাকি। আমার আশেপাশে একটা মৃদু কোলাহল অনবরত হয়ে চলেছে। কিন্তু সেটাকে আমি আমার কানে ঢুকতে দিই না। মনটা যখন নিজের ভিতরে শান্ত হয়ে একটু থিতু হয়, তখন একটা নেশা নেশা ভাব আসে। ওইটা আমার নেশা।

আজকে সকাল থেকেই আমার মনের মধ্যে কেমন যেন কু-ডাকছিল। আসলে কথায় বলে না, কপালের লিখন খন্ডানো যায় না। অবশ্য এই বিষয়টাকে আমি একটু অন্যভাবে দেখি। এখন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যুগ। গুগল নিউজ খুললে প্রায়শই দেখা যায় কিছু-না-কিছু কোয়ান্টাম মেকানিক্স সংক্রান্ত খবর। হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে, একইসঙ্গে। কিন্তু যেই আমি আমার পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করলাম, হয়ে গেল। আবার যেই আমি অনুভব করলাম না, হলো না।
জটিল লাগছে তো?
স্বাভাবিক, বড় কোন এক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বৈজ্ঞানিক বলে গেছেন, “যদি তুমি মনে করো তুমি কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোঝো, তাহলে তুমি কিছুই বোঝনা।”
সুতরাং আমি যে ব্যাপারটা বুঝি না সেটা পাক্কা। তবে এখন মেশিন লার্নিং এর যুগ। আমি আবার পেশায় চার্টার্ড ডাটা সায়েন্টিস্ট। তাই ডাইনে-বাঁয়ে ওপরে-নিচে, শরীরে-মনে, আমার নানা রকম অ্যালগরিদম। এসব অ্যালগরিদম দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন মডেল তৈরি করা যায়। যা কিনা অনবরত ঘটমান তথ্যের বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে তার সম্ভাবনা কষে ফেলতে পারে। একেবারে হলফ করে বলা যাবে না যে প্রেডিকশন মিলবেই। তবে কত শতাংশ সম্ভাবনা আছে মিলে যাবার, সেটা বলা যাবে। অনেকটা জ্যোতিষীদের ভবিষ্যৎবাণীর মত। শুধু ওখানে কত শতাংশ মেলার সম্ভাবনা আছে সে বিষয়ে তেমন চর্চা হয় না, এই যা পার্থক্য। আমি মনে করি, কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন ডিপ লার্নিং মডেল মানুষের ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দিতে পারে। আমাদের মাথার ভিতরেও এরকম লক্ষ লক্ষ মডেল ভরা আছে। কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন নয়, প্রাকৃতিক জৈব বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন। সুতরাং এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়না যে আমাদের মস্তিষ্কের, অনবরত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে, ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষমতা আছে। নিশ্চিত করে বলা না গেলেও, অন্তত থাকার সম্ভাবনা আছে। আমার তো মনে হয় সেকারণেই মনের মধ্যে মাঝে মাঝে কু-ডাকে। মনে হতে থাকে আজ বুঝি কিছু গন্ডগোল হবে।
অনেক সময় হয়না কি? বিলক্ষণ হয়। কি করে মেলে? সম্ভাবনা। আরে বাবা, প্রব্যাবিলিটির যে অংক, আমাদের মাথার ভিতরে ঠাসা আছে, তাই দিয়ে মেলে। আজও আমার মস্তিষ্ক কিছু একটা গোলমাল এর পূর্বাভাস দিচ্ছিল। মনটা থিতু হয়ে যাবার পর, নেশাটা সবে জমেছে, এমন সময় একটা সুরেলা গলার স্বর আমায় তুরীয় অবস্থা থেকে কঠিন বাস্তবে টেনে নিয়ে এল।

“আপনার লাইটারটা একটু নেব?”

Dream Quantum Pool

তাকিয়ে দেখে আমি তাজ্জব। আমার সামনে দাঁড়িয়ে এক আফ্রিকান সুন্দরী যুবতী। তার শরীর জুড়ে চাঁদের পাহাড়ের কারুকার্য। তবে সে আফ্রিকান বলে আমি মোটেই অবাক হইনি। এ জায়গায় বিদেশিদের যথেষ্ট আনাগোনা আছে। আমার অবাক হবার কারণ হল, পরিষ্কার বাঙালি এ্যাকসেন্টে বাংলা কথা। তাও এক আফ্রিকান সুন্দরীর মুখে। তবে সে বোধহয় আমার মতন অবাক পৃথিবীর আকছার মোকাবিলা করে অভ্যস্ত। আমার ভ্যাবাচ্যাকা মুখটার দিকে তাকিয়ে, সে এক লহমায় বলল, “বাবা-মা দুজনেই বাঙালি। তিন মাস বয়সে ঘানা থেকে আমাকে অ্যাডপ্ট করেছিল। সুতরাং পৈতৃকসূত্রে আমি বাঙালি এবং হিন্দু।”
“নাও, ক্যান আই বরো ইউর লাইটার?”

বলছিলাম না মনটা কু-ডাকছিল। আমার এই নেশাভঙ্গ ব্যাপারটা একদম ভালো লাগেনা। সমাধির একদম কাছাকাছি চলে গেছিলাম। আর একটু হলেই মনটা মাধ্যাকর্ষণ ছাড়িয়ে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যেত। এই অর্ধনগ্ন মহিলা, আমার ঘণ্টাখানেকের পরিশ্রমে জল ঢেলে দিল।

সুন্দরী দেবী, মানুষের মনের কথা পড়তে পারে কিনা কে জানে। মাঝেমাঝে আমার মনে হয় এ জায়গাটা মহাপুরুষ এবং মহামানবীদের লীলাক্ষেত্র।

মেয়েটি বলল, “আমি জানি আপনি বিরক্ত হন। আজ ইচ্ছে করলো আপনাকে একটু বিরক্ত করি। আচ্ছা, আপনি কি সত্যিই ভদ্রলোক? কোন মেয়ের দিকে আড় চোখেও তাকান না? আমি আপনাকে অনেকদিন ধরে স্টক করছি।”

যদিও বিরক্ত আমার সত্যিই লাগছিল। এখন একটু ইন্টারেস্টিং লাগছে। মেয়েটার কথায় একটা টান আছে। যে টান মানুষকে রসাতলে নিয়ে যেতে পারে। তবে একটু বুঝেশুনে খেলতে হবে। না হলে আমার দীর্ঘ তপস্যা অর্জিত, কঠিন মানসিক অনুশাসন দ্বারা লালিত, সাধের ব্রহ্মচর্য, খবর হয়ে যেতে পারে। তাই যতটা শর্টে পারা যায় কনভারসেশন শেষ করতে হবে, আর তার মধ্যেই যতটা বেশি সম্ভব তথ্য বার করে আনতে হবে। এটা অবশ্য আমার প্রফেশনাল স্কিল। ডাটা সাইন্টিস্টদের একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় থাকে, যেটা দিয়ে তারা সঠিক এবং প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে নেয়। তাই আমি গম্ভীর ভাবে বললাম, “সেকি আমায় স্টক করো? কই আমি তো কখনো বুঝতে পারিনি।”

মেয়েটি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, “বুঝতে পারবেন কি করে, আমি ঘন্টার পর ঘন্টা আপনার উপর নজরদারি করে একবারের জন্যেও দেখলাম না আপনি অন্য কারো দিকে তাকিয়ে আছেন। অনেক সময় মনে হয় আপনি কারো দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় আপনার চোখ দুটো কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে আছে। যেন শাটার বন্ধ ক্যামেরার লেন্স। আলো ঢুকে সেন্সর অব্দি পৌঁছানোর রাস্তা বন্ধ। আপনি কিছু নেশা টেশা করেন নাকি?”

পরিস্থিতি বিশেষে অনেক সময় মানুষকে একটু রূঢ় হতে হয়। এই মুহূর্তে আমার রসাতলে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। তাই আমি ডাইরেক্ট ক্লোজিং স্টেটমেন্টে চলে গেলাম।

“আপনি লাইটারটা ব্যবহার করতে পারেন।”

মেয়েটা লাইটার দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফিরে গেল। আর আমি ভাবলাম আমার ফাঁড়া কেটে গেল। ডাটা সায়েন্স কেবলমাত্র আমার পেশা নয়, আমার ধর্মও বটে। তাই আমার ধর্মের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস। কিন্তু মুশকিল হল আমার ধর্মও, অন্যান্য সব ধর্মের মতই, সম্ভাবনা আর বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বলছিলাম না, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যুগ। ফাঁড়া কাটতেও পারে, আবার নাও কাটতে পারে। মানে একইসঙ্গে, ফাঁড়া কেটে যাবে, আবার কাটবেওনা। জঘন্য গোলমেলে ব্যাপার। আর সেই জঘন্য গোলমেলে ব্যাপারটাই আমার সাথে আজ ঘটলো। ফাঁড়া কেটে গেল, আবার কাটলোও না। মেয়েটা চলে যাবার পর, শরীরটা যেই একটু হেলিয়ে দিয়ে চোখ দুটো আকাশের দিকে ছড়িয়ে দেবার উপক্রম করছি। অমনি চমকে উঠলাম। আমার পাশে একটা বয়স্ক দাদু টাইপের লোক কোথা থেকে একটা বসার জিনিস টেনেটুনে এনে বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মিচকি মিচকি হাসছে। শালা দিনটাই খারাপ মাইরি। কার মুখ দেখে উঠেছিলাম কে জানে। এসব জায়গায় চেনাশোনা না হলে কেউ কারো সাথে খেজুরে আলাপ করতে আসে না। আর আমার তো কেউ চেনাশোনা নেই। চেনাশোনা হয়ে যাওয়ার ভয়ে, আমি কারো দিকে তাকাই পর্যন্ত না।
আমি মুখে একটা দেঁতো হাসি এনে বললাম, “আসলে আমার একটু প্রাইভেসির দরকার ছিল। এখানে তো জায়গার অভাব নেই, আপনি যেকোনো জায়গাতেই বসতে পারেন।”

ভদ্রলোক, মানে দেখে তো ভদ্রলোকই মনে হচ্ছে, তাছাড়া এখানে যারা আসে, তারা ভদ্র হোক বা না হোক, প্রকাশ্যে অভদ্রতামি করা থেকে বিরত থাকে। তবে আমার এখন একটু সন্দেহ হচ্ছে। ধরা যাক ভদ্রলোকের মতন দেখতে। তা সেই ভদ্রলোকের মতন দেখতে লোকটা, মুখের সেই হাসি হাসি ভাবখানা বজায় রেখে, আমার দিকে একটু ঝুঁকে, গলাটা একটু নামিয়ে এনে, বলল; “আপনি একটা আস্ত বাল।”

দিস ইজ টু মাচ। এতটাও সহ্য করা যায় না। তবে আমার আবার এমপ্যাথিটা একটু বেশি। মানে সমানুভূতি। ওই আমাদের সহানুভূতির পিসতুতো বোন। তাই হট করে লোককে অপমান করতে পারি না। এই দুর্বলতাটা আমি পৈতৃকসূত্রে আমার বাবা-মায়ের থেকে পেয়েছি। আমার ভয় হচ্ছে। এখানে উচ্চকোটির নেশাখোরদের অবাধ আনাগোনা। তারপর কথায় কথায় খচে গিয়ে যদি চার অক্ষর পাঁচ অক্ষরের বাংলা বলতে থাকে, উল্টে আমারই প্রেস্টিজে গ্যামাক্সিন পড়ে যাবে। কোথা থেকে কে ভিডিও করে টুইটারে ছেড়ে দেবে, ব্যাস আমার সম্মানের গ্যাং রেপ কে আটকায়। দেখে আবার মনে হচ্ছে ভদ্রলোক সিনিয়ার সিটিজেন। আমার থেকে না হলেও বিশ বছরের বড়।
তাই আমি যতটা সম্ভব ভদ্র-কড়া ভাবে বললাম, “কি যা তা বলছেন। আশে পাশে লোকজন আছে। চেনা নেই শোনা নেই, উড়ে এসে জুড়ে বসে খিস্তি পারছেন? আপনার মান সম্মান না থাকতে পারে। আমার তো আছে।”

ভদ্রলোক সেই একই ভঙ্গিমায়, মিষ্টি হাসিটা বজায় রেখে, গলাটা খাদে নামিয়ে বলল, “বাল আছে।”

“মানে? এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।”

“কিস্যু বাড়াবাড়ি হচ্ছে না। এই যে এখানে আশেপাশে যত  লোকজন দেখছেন না, কচি, ডাঁসা, রসালো এবং ঢ্যামনা সব রকম, এদের দুটো দল আছে। একদল মনে করে, আপনি একটা খ্যাপা(বিঁপ)দা সাইন্টিস্ট। ওই ডাটা চচ্চড়ি বানাতে বানাতে আপনার মাথার তার গুলো কেটে গেছে। আরেকদল মনে করে আপনি একটা পাক্কা হারামি। মানে বাইরেটা সাধুসন্তের মতন, আর ভেতরেটা সাইকো রেপিস্ট টাইপ।”

ততক্ষনে আমার কান থেকে ঝর-ঝর করে রক্ত পড়তে শুরু করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে মস্তিষ্কের ভেতরেও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমার ধারণা ছিল লোকে আমাকে সেভাবেই দেখে, যেভাবে আমি ওদের দেখাই। আমার পাবলিক ইমেজটা তেমন, যেমনভাবে আমি সমাজে নিজেকে উপস্থাপন করি। এখন সত্যিই নিজেকে একটা আস্ত গান্ডু মনে হচ্ছে।
সরি কিছু মনে করবেন না, আমি যে মানসিক স্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, সেটা বিচার করলে শব্দচয়নটা ঠিকই আছে। আমি যাই চাই না কেন, আমার ব্যক্তিত্ব ঠিক কেমন হবে সেটা নির্ভর করে যে আমাকে দেখছে তার ওপর। মানে আমি যদিও মনে করি আমি ভদ্র, সভ্য এবং মার্জিত, কিন্তু সেই মনে করার কোনো দাম নেই। কারন যে আমাকে দেখছে, সে যদি মনে করে আমি একটা ইতর ছোটলোক এবং বর্বর, তাহলে আমি একটা ইতর ছোটলোক এবং বর্বর। অর্থাৎ একই সঙ্গে, আমি ভদ্র সভ্য মার্জিত, এবং ইতর ছোটলোক বর্বর। আমি আসলে কি, সেটা নির্ভর করবে যে দেখছে তার ওপর। হম্। মনের মধ্যে সত্যিই একটা গান্ডু গান্ডু ফিলিং আসছে।

দিন তো আমার বরবাদ হয়েই গেছে। আর সামনেই যে খচ্চর টাইপের লোকটা বসে আছে, আজকের দিনটা তারই। সুতরাং ট্রুস ছাড়া গতি নেই। অবশ্য সমাজের চোখে নিজেকে দেখার একটা তীব্র বাসনা আমাকে এ লোকটার সাথে কথোপকথন চালিয়ে যেতে বাধ্য করছে। আমি যখন এমন সাত পাঁচ ভাবছি, লোকটা নিজে নিজেই বলে উঠলো; “আপনি তো আবার চার্টার্ড ডেটা সায়েন্টিস্ট। সম্ভাবনার অংক নিশ্চয়ই বোঝেন?”

এই একটা বিষয় আমার কোনো সন্দেহ নেই। তাই আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সাথেই বললাম, “আলবাত বুঝি। সম্ভাবনার অংকে আমার সাথে পাল্লা দেবার মতন এ পৃথিবীতে আর হাতেগোনা কয়েকজন আছে।”

ভদ্রলোক একেবারে তুমিতে নেমে এলেন।
“তাহলে এটাও নিশ্চয়ই তুমি জানো, আমাদের জীবনে প্রতিমুহূর্তে সম্ভাবনা অর্থাৎ অপরচুনিটি সৃষ্টি হচ্ছে। প্রত্যেক সম্ভাবনার নিরিক্ষে আমাদের যে ক্রিয়া, তার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় এক একটি স্বতন্ত্র ঘটনা। যে ঘটনা ঘটতেও পারে, নাও ঘটতে পারে। তুমি নিশ্চয়ই একথা অস্বীকার করবে না।”

নাহঃ। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ভদ্রলোক ঠিকই বলেছেন। তবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স সম্পর্কে যার গভীর জ্ঞান নেই, তেমন কারোর এ বিষয়ে এত পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি থাকার কথা নয়।

আমি আন্দাজ করে বললাম, “আপনার বুঝি কোয়ান্টাম মেকানিক্স?”

“পারফেক্ট ইনটুইটিভ প্রেডিকশন। অধমের নাম, ডক্টর বশিষ্ঠ্য গাঙ্গুলী।”

আমি এতটাও আসা করিনি। ডক্টর বশিষ্ঠ্য গাঙ্গুলী, এই যুগের বিশিষ্ট পদার্থ বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে একজন। কানাঘুষো শোনা যায় ওনার নোবেল পাওয়াটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। ওনার অনেক গবেষণাপত্র, আমি আমার নিজের পেপারে উল্লেখ করেছি। মনে মনে একে আমি আমার ইষ্ট দেবতা মনে করে পুজো করি। আমার মনের ভিতরে ঠিক কি হচ্ছে, সেটা ভাষায় বোঝাতে পারছিনা। আমার বাবা ভীষণ আস্তিক মানুষ। মা দক্ষিণা কালীর ভক্ত। ভক্ত বললে ভুল বলা হয়, অন্ধ ভক্ত। আমার বাবা যদি কোনদিনও ঠাকুরের সামনে, চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করার পর, চোখ খুলে দেখতো সামনে স্বয়ং দক্ষিণাকালী দাঁড়িয়ে আছে জিভ বার করে, তাহলে বাবার মনের অবস্থাটা ঠিক যে রকম হতো, আমার অবস্থাটাও এখন ঠিক সেইরকম।

আমার মনে তাই গদগদ ভক্তিভাব। আমার ইষ্ট দেবতার মুখনিঃসৃত বাণী, একে একে আমার সামনে জীবনের গুঢ় সব রহস্য উন্মোচন করছে, আর আমি চেতনার ঊর্ধ্বে গিয়ে বিভোর হয়ে দিব্য জ্ঞান লাভ করছি। প্রভু বলে চলেছেন,
“প্রথমদিন তোমাকে দেখে আমার হোমো বলে মনে হয়েছিল। আমি নিজে অবশ্য ছোট থেকেই হোমোসেক্সুয়াল।”

কথাটা আমার কানে বজ্রপাতের মত শোনালো। বিশ্বজোড়া খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক, আমার ইষ্ট দেবতা, হোমোসেক্সুয়াল এটা আমার পক্ষপাতদুষ্ট মনের পক্ষে মেনে নেওয়া খুব কঠিন। ছোটবেলাকার অশিক্ষা, এ বিষয়ে আজও আমার মনের বিকাশ ঘটতে দেয়নি। অনেক কষ্টে মনটাকে বোঝালাম, উনি হোমোসেক্সুয়াল, এই তথ্যটা যদি আমি আমার তথ্য ভাণ্ডার থেকে সরিয়ে ফেলি, তাহলে আমার মনের মধ্যেকার বিবমিষাটার উপশম ঘটে। ব্যাপারটা অনেক ইজি হয়ে যায়। তাই আমি কথামৃতে মন দিলাম।

“প্রথমে একদিন দুদিন দেখলাম, তুমি বাপু কোন মেয়েদের দিকে তাকাও না। মানে তোমার মতন পুরুষ মানুষদের চোখে মেয়ে দেখলেই যে ছোকছোকানিটা থাকে, তোমার চোখে সেটা নেই। প্রথমে আমি খুশি হয়েছিলাম। আমার আন্দাজ যদি খুব ভুল না হয় তাহলে তুমি আমার থেকে বছর বিশেকের ছোট। একটু কম বয়সের ছেলেদের সাথে সেক্স করতে আমার বেশ লাগে।”

আপনাদের বলতে লজ্জা নেই, এটা শুনে, আমারি পটি করার জায়গাটা একটু টনটন করে উঠল। তবে প্রভু অন্তর্যামী। উনি বলে উঠলেন;
“তোমার অবশ্য ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি যে হোমোসেক্সুয়াল নও সেটা বুঝতে আমার বেশি টাইম লাগেনি। এসব ইনবর্ন স্কিল। তপস্যায় অর্জন করতে পারা যায় না। যাইহোক, যেটা বলছিলাম। ওই যে আফ্রিকান দেবী তোমার কাছে গায়ে পড়ে লাইটার চাইতে এল। এটা একটা অপরচুনিটি। সম্ভাবনা মাত্র। তারপর যা ঘটলো, সেটা নাও ঘটতে পারত। ঘটনাটা প্রত্যক্ষ করার পদ্ধতিটা যদি তুমি একটু আলাদা করতে পারতে, তাহলে এই মুহূর্তে আফ্রিকার দেবীর সাথে তুমি স্বর্গ সুখ উপভোগ করতে পারতে। অংকের হিসেবে দুটো ঘটনা ঘটারই সম্ভাবনা সমান সমান ছিল। তোমার দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করে দিলো, তুমি কোন ঘটনাটা প্রত্যক্ষ করবে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স, বুঝলে? পিওর কোয়ান্টাম মেকানিক্স। যা একমাত্র চরম সত্য; এবং একইসঙ্গে চরম মিথ্যে।”

“না। মানে, ব্যাপারটা অন্যরকম ভাবে ডিল করলে, কি ঠিক হতো স্যার? মানে এই যে আমার বহু কষ্টার্জিত, বহু কৃচ্ছসাধনের ফলে অর্জিত, একটা সাধু সাধু ইমেজ। এটা কি নষ্ট হয়ে যেত না?”

“না, যেত না।”

“যেত না বলছেন? কিভাবে?”

“কোয়ান্টাম মেকানিক্স কি বলে? বাক্সের মধ্যে একই সঙ্গে বেড়াল আছে, এবং নেই। যতক্ষণ না খুলে দেখছো, বিড়াল নেই, এবং আছে। ঠিক?”

“আমি বললাম, ঠিক।”

“তারমানে তুমি যদি সাধু হও, তাহলে একই সঙ্গে তুমি শয়তানও বটে।”

সাধে কি আমি ইষ্ট দেবতা বলে পুজো করি? এ মানুষতো মানুষ নয়, দেবতা নিশ্চয়। তার যুক্তি নির্ভুল বলেই ধরে নিতে হবে। এছাড়া উপায় কি। জ্ঞানের সর্বোচ্চ সীমায়, সবকিছু কেমন যেন ধোয়া ধোয়া হয়ে যায়।

এতক্ষণে আমি নিশ্চিত। যে আমি একই সঙ্গে সাধু, এবং শয়তান।
তাই বললাম, “তাও ঠিক।”

প্রভু বলে উঠলেন, “তবে! তুমি একাধারে সাধু এবং শয়তান। প্রত্যক্ষভাবে তোমার স্বর্গ লাভ হল না। তুমি অপরচুনিটি মিস করলে। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সূত্র অনুযায়ী ধরে নিতে হবে একইসঙ্গে তোমার স্বর্গলাভ হয়েছে। অর্থাৎ তোমার ব্রহ্মচর্য তুমি ধরে রাখতে পারোনি। তুমি ব্রহ্মচারী, একইসঙ্গে ভ্রষ্টাচারী।”

আমি বললাম, “তাও বটে।”

তবে মনে তখনো আমার সামান্য খটকা লেগে রয়েছে। প্রভূ তো অন্তর্যামী, তাই বলে উঠলেন, “আমি একটা গল্প বলি শোনো। তাতে যদি তোমার মনের খটকা দূর হয়। তার আগে বল, কলকাতার ভিড় বাসে চেপেছো?”

“হ্যাঁ সে স্কুল-কলেজের টাইমে অনেক চেপেছি। তারপরে গাড়ি বাবু হয়ে গেলাম। আর বাসে চাপা হয়না।”

“কোনদিন ভিড়ের মধ্যে, ধর সামনে কোন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে, তার কোন সেনসিটিভ অর্গানে, তোমার কোন সেনসিটিভ অর্গান, এ্যাক্সিডেন্টালি টাচ্ হয়েছে?”

প্রশ্নটা শোনার পর, যদিও আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না, তবে বেশ বুঝতে পারছিলাম, যে আমার কান গুলো গনগনে আগুনের মত লাল হয়ে উঠেছে। বিশ্বাস করুন, অন্য যে কেউ হলে, হয়তো আমি মাথা গরম করে, না পারলেও, অন্তত ভাবতাম, লোকটাকে জুতোপেটা করি। কিন্তু এতো যে সে লোক নয়, এ যে দেবতা নিশ্চয়। তাই যথেষ্ট বিনয়ের সঙ্গে বললাম,
“ছিঃ, ছিঃ! কি যে বলেন। বাসে ট্রামে আমি বরাবর যেকোনো বয়সী মহিলার থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলেছি। একজন পুরুষ মানুষ হিসেবে, একজন সুনাগরিক হিসেবে, এটা আমার দায়িত্ব, যাতে আমার শরীরের কোন সেনসিটিভ অংশের স্পর্শ যেন কোন বয়সী মহিলারই শরীরের কোন সেনসিটিভ অংশে না লাগে। এটা সুনাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্ব, কর্তব্য।”

তবে প্রভুর চিন্তাভাবনা যে অনেক উচ্চমার্গের হবে সে আর আশ্চর্যের কি।
“তারমানে তোমার শরীরের কোন সেনসিটিভ অংশের ছোঁয়া কোনদিন বাসে ট্রামে কোন মহিলার শরীরের কোন সেনসিটিভ অংশে লাগেনি। তাইতো?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ।”

“কোয়ান্টাম মেকানিক্সের থিওরি অনুযায়ী কিন্তু লেগেছে।”

“লেগেছে মানে?” আমি করুণভাবে বললাম, “আমি কিন্তু সত্যিই লাগাই নি।”

“তা বাপু তুমি যাই বলো। আর বিজ্ঞান যদি বুজরুকি না হয়। তাহলে একই সঙ্গে তুমি লাগিয়েছো এবং লাগাওনি। দুটোই সত্যি।”

এ তো মহা ফাঁপরে পড়া গেল। একদিকে এতদিনের শিক্ষাদিক্ষা, অন্যদিকে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আবার আমার ধর্ম। মনের মধ্যে আবার কু-ডাকছে। কে জানে কি আছে কপালে। এখন আমার ওই পটি করার জায়গাটা সামলাতে পারলেই যথেষ্ট।

“তুমি গল্পের এক দিকটা দেখতে পাচ্ছ। অন্য দিকটা আমি তোমাকে আমার গল্পের মধ্যে দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করি।
আমারও ওই ব্যাপারটা তোমার মতোই কোনদিন হয়নি। নট ইভেন ইন অ্যাক্সিডেন্ট। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে আটকায় কার সাধ্যি। যে ঘটনা কোনদিন ঘটেনি, সে ঘটনাও একদিন ঘটে গেল। রাত তখন ন’টা কি সাড়ে নটা হবে। মিন্টু পার্ক থেকে আমি একটা মিনি বাসে উঠেছি। যাব কসবা। বাসে প্রচন্ড ভিড়। হাত দুটো দিয়ে মহাপ্রভু গৌরাঙ্গের মতন উপরের হ্যান্ডেলটা ধরে আছি। বাকি বডিটা জার্কিং-এর সঙ্গে বেশ এ্যাডজাস্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ডাইমেনশন থেকে অংকের নিখুঁত হিসেবে যে নিখুঁত চাপ জালিকার সৃষ্টি হচ্ছিল, তার মধ্যে আমি আর নিজের বডি ওয়েট ফিল করতে পারছিলাম না। অনুভূতিটা বেশ মজার। বেশ একটা নো গ্রাভিটি, নো গ্রাভিটি ফিলিং। তখন এসব অভ্যাস ছিল। আস্তে আস্তে বাস ফাঁকা হয়ে আসবে। চাপটাও কমতে থাকবে। আমি আবার নিজের ওজন ফিরে পাবো। এমন সময়, একটা নরম, কিঞ্চিত উষ্ণ, স্পর্শ অনুভব করলাম। স্পর্শের অনুভূতিটা আমার যে বিশেষ অঙ্গের লক্ষ লক্ষ নিউরনে ধরা পরল, আমার সেই বিশেষ অঙ্গটিও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম মেনে চলে। ইনি নরম, এবং একইসঙ্গে শক্ত। তুমি নিশ্চয়ই জানো, যে একথা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, কেবলমাত্র পদার্থে পদার্থে ধাক্কা লাগতে পারে, পদার্থবিজ্ঞানে বর্তমানে এ ধারণা ভুল। শক্তির সাথে শক্তির সংঘাতেও সম্পূর্ণ নতুন এক তৃতীয় শক্তির সৃষ্টি হতে পারে। সেদিন জীবনে প্রথমবার অনুভব করলাম কোয়ান্টাম মেকানিক্সের খেলা। শক্তির সাথে শক্তির সংঘাতে আরো শক্তিমান তৃতীয় শক্তির সৃষ্টি। যাবতীয় জাগতিক যাকিছু সব মিলেমিশে একাকার। একইসঙ্গে নরম, এবং শক্তের অনুভূতি। চরম উষ্ণ, অথচ চরম শীতল। তখন বুঝেছি পৃথিবীর উষ্ণতা কেন উত্তপ্ত লাভা হয়ে বেরিয়ে আসে। জানিনা সে অনুভূতি কতক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল। আমার যখন সম্বিত ফিরেছে। তখন রাত প্রায় বারোটা। বাসটা ততক্ষনে সাইডিং এর ধারে পার্ক করে ড্রাইভার আর খালাসি নেমে বাড়ি চলে গেছে। আমি কতক্ষণ বাসের হ্যান্ডেল ধরে পাথরের মতন দাঁড়িয়ে ছিলাম জানিনা। আমার অনেকবার মনে হয়েছে। একে একে সবাই বাস থেকে নেমে গেল তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে, আর আমার মতন একটা জলজ্যান্ত লোক ফাঁকা বাসে হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে আছে। ড্রাইভার খালাসী সবাই বাড়ি চলে গেল, আমাকে ওই পরিতক্ত বাসটার মধ্যে ফেলে? ব্যাপারটা কেমন যেন অসম্ভব মনে হয়। কখনো কখনো মনে হয় আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।
তুমি কি বলো? ঘটনাটা কি আদৌ ঘটেছিল?”

“আমি আর কি বলবো স্যার। যা বলার, সেতো কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলেই দিয়েছে। ঘটনাটা একইসঙ্গে ঘটেছিল, এবং ঘটেনি। আজব এই কোয়ান্টাম দুনিয়া।”

“আশা করি তাহলে এটাও বুঝেছ, আমি কেন তোমাকে প্রথমেই বলেছিলাম, তুমি একটা আস্ত বাল।”

“আজ্ঞে বুঝেছি। আফ্রিকান দেবীর সাথে আমার স্বর্গ দর্শন হয়নি, এবং হয়েছে। যদি হয়নিটা হয়েছে, তাহলে হয়েছেটাও হয়েছে। হতেই হবে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স ভুল হতে পারে না। জয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জয়। জয় প্রভু বশিষ্ঠ্যাচার্যের জয়।”
এই বলে যেই প্রভুর পদধূলি নেবার জন্য দুই হাত বাড়িয়েছি। কোথায় প্রভু, সামনে চেয়ারটা ফাঁকা, অ্যাস্ট্রেতে প্রভুর আধখাওয়া সিগারেট এখনো জ্বলছে। প্রভু আছে, কিন্তু নেই। নেই, কারন আমি এখন দেখতে পাচ্ছি না। যেই আমি দেখব, প্রভু নেই থেকে আছে হয়ে যাবে।

যাই, আজ রাতে আর বাড়ি ফেরা হবেনা। আফ্রিকান দেবীর সঙ্গে স্বর্গ দর্শনের হাতছানি আজ উপেক্ষা করে কার সাধ্য। আজ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দিন।

অতঃপর, স্বর্গ দর্শন।

Copyright @ Jewel Chanda

Author

  • জুয়েল চন্দ

    Advocate Jewel Chanda is an accomplished legal professional with over 15 years' experience in the legal field. He has served as a Judge for 10 years in the West Bengal Judiciary and is currently practicing before the High Court at Calcutta and in various Trial Courts of the District Judiciary. A Gold Medalist, Mr. Chanda holds two Bachelor's degrees, one of which is Law, along with four Master's degrees in Law (Criminology), Business Law, Environment & Development and Sociology. He is also a Doctoral Research Scholar of Jindal Global Law School whose research area focuses on Artificial Intelligence and Law. With exceptional expertise in both civil and criminal litigations including family matters and property matters, Advocate Chanda is highly trained to handle trials, appeals and revisions. He is well-versed in all aspects of the law and litigation, making him an invaluable asset to protect the legal rights of the poor and weaker section of the society. Contact Advocate Chanda at jewelchanda@gmail.com

    View all posts

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore