বাংলা অণুগল্প : “মন্ত্রী”
পলাশ ভুঁইয়া স্টেজে উঠতেই কুসুম ডাঙ্গা ক্লাব প্রাঙ্গণে হাত তালির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। হবে নাই বা কেন? গ্রামের ছেলে মন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবার জন্মভিটেতে এসেছে। গত কয়েকদিন ধরেই গোটা গ্রামে সাজো সাজো রব। সবার একটাই আশা, এবার গ্রামের উন্নতি হবে।
পলাশবাবু নমস্কার আর পুষ্প স্তবক নেওয়ার পালা চুকিয়ে শুরু করলেন ভাষণ। প্রথমে গ্রামের উন্নতির কথা দিয়েই আরম্ভ হল।
“আমি গর্বিত এই গ্রামে আমার জন্ম হয়েছে। এই গ্রামের প্রতিটি মানুষ আমার আত্মার বন্ধু, মানে আত্মীয়।”
এই পর্যন্ত বলার পর আরো কিছু কথা উনি বলেছেন, কিন্তু প্রবল হাততালিতে তা শোনা গেলো না। হাততালির শব্দ একটু কমতে আবার শুরু করলেন,
“আমি চাই আমার গ্রামে কেউ যেন অভুক্ত না থাকে। বয়স্ক মানুষেরা যেন থাকা খাওয়ার সুবিধাটুকু পায়। আর আমি, আপনাদের পলাশ। এই গ্রামের ছেলে পলাশ। আমি কথা দিলাম এই ব্যবস্থা আমি করবো।”
আবার হাততালিতে ফেটে পড়লো চতুর্দিক।
পলাশ বাবুর যাওয়ার সময় হঠাৎ একটি যুবক এগিয়ে এসে বলে,
“স্যার যদি কিছু মনে না করেন তো আমার কিছু বলার আছে।” মন্ত্রী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই যুবকটি বলে উঠলো “স্যার আমি এই গ্রামের ছেলে নই। সমাজ সেবার কাজে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাজ করি। কয়েকদিন আগে টাউন থেকে এক অসুস্থ বয়স্ক মহিলা ভিক্ষুককে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে হোমে রেখে এসেছি। আসলে মহিলার মাথায় মনে হয় একটু গণ্ডগোল আছে।”
মন্ত্রী এবার যুবকটির কাঁধে হাত রেখে বললেন, “বাহ! খুব ভাল।”
তারপর ওনার সেক্রেটারির দিকে তাকিয়ে বললেন, “এর থেকে ডিটেলস নিয়ে নিন। দেখবেন যেন কোন অসুবিধা না হয়।”
তারপর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললেন, “ভাই তুমি আমাদের পার্টি জয়েন কর। এইরকম ছেলেই দেশের কাজে প্রয়োজন।”
যুবকটি আমতা আমতা করে বলল, “না মানে। মহিলা নিজের নাম বলছেন মায়া ভুঁইয়া। আর বিড় বিড় করে বলছেন মন্ত্রী পলাশ ভুঁইয়া আমার ছেলে।”
মন্ত্রী মশাই একটু যেন থমকে গেলেন। তারপর সামলে নিয়ে বললেন, “ ঠিকই তো বলেছেন। এ গ্রামের প্রতিটি মহিলাই তো আমার মা।”
এটুকু বলেই মন্ত্রী মশাই এগিয়ে গেলেন। চারিদিকে প্রবল হাততালি।
কলমে – গোপা ঘোষ
Author
-
কলকাতা নিবাসী গোপা ঘোষ একটি কন্যা সন্তানের জননী। উনি কবিতা এবং গল্প লিখতে ভালোবাসেন। পেশা বেসরকারি সংস্থায় চাকুরী।
View all posts