সাধারন ভাবে মনে করা হয় ব্ল্যাক হোলের প্রচণ্ড মহাকর্ষীয় বল সেখান থেকে কিছুই বেরোতে দেয় না। সেই প্রবল আকর্ষণ ভেদ করে ব্ল্যাক হোল থেকে আলো পর্যন্ত বেরোতে পারেনা। কিন্তু এই প্রথমবার নাসা রেকর্ড করল ব্ল্যাক হোলের শব্দ। প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে যা ভাইরাল হয়েছে। কেউ বলছে ব্ল্যাক হোলের ভুতুড়ে শব্দ, তো কেউ বলছে ভয়ঙ্কর বিকট গর্জন। নেটিজেনদের মধ্যে এই নিয়ে আগ্রহের অভাব নেই। আসুন জেনে নি আসলে বাপারটা কি। কিভাবে নাসা রেকর্ড করল ব্ল্যাক হোলের আওয়াজ।
ব্ল্যাক হোলের গর্জন শোনা যাবে নাসা প্রকাশিত অডিও ক্লিপ থেকে:
সম্প্রতি নাসা একটা অডিও ক্লিপ শেয়ার করেছে যেটা থেকে আপাতভাবে মনে হতে পারে যে আমরা ব্ল্যাক হোলের শব্দ শুনতে পারি। শব্দ হল বাতাসে প্রবাহিত তরঙ্গ বা কম্পন। এই তরঙ্গ আমাদের কানের পর্দায় ধরা পড়লে মস্তিষ্কের অডিটরি কর্টেক্স সেটা প্রসেস করে আমাদের শব্দ শোনায়। মানুষের শব্দ শোনার ক্ষমতা সীমিত হওয়ার জন্য আমরা সব ধরনের শব্দ তরঙ্গ শুনতে পাই না।
2003 সাল থেকে, নাসার বৈজ্ঞানিকেরা পার্সিয়াস গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাক হোল থেকে নির্গত তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে ব্ল্যাক হোল থেকে তৈয় হওয়া চাপ গরম গ্যাসের ক্লাস্টারে তরঙ্গের ঢেউ সৃষ্টি করে। সেই তরঙ্গকে একটা বিশেষ অ্যালগরিদমের মাধ্যমে শ্রবণযোগ্য শব্দ তরঙ্গে রূপান্তরিত করা যায়। এই পদ্ধতিতে মহাকাশ থেকে সংগৃহীত মহাজাগতিক তথ্য বা ডাটাকে শব্দ তরঙ্গে রূপান্তরিত করা হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘sonification’। নাসার দাবি অনুযায়ী এই ক্ষেত্রে শোনিফিকেশন পদ্ধতি একটু আলাদা। কারণ এক্ষেত্রে জড়িত কিছু প্রকৃত শব্দ তরঙ্গ যা খুঁজে বার করা হয়েছে NASA -র চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি থেকে পাওয়া তথ্য থেকে।
আমরা জানি যে শব্দ প্রবাহের জন্য মাধ্যম লাগে। কিন্তু মহাকাশে বেশিরভাগ স্থানেই শূন্যতা এবং শূন্যস্থান দিয়ে শব্দ চলাচল করতে পারে না। তাই প্রচলিত ধারনা মহাকাশে কোন শব্দ নেই। নাসার অডিও ক্লিপ এই প্রচলিত ধারনাকে ভুল প্রমানিত করে। মহাকাশে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে কোটি কোটি ছায়াপথ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস। এই গ্যাসের আস্তরণ শব্দ তরঙ্গকে ভ্রমণের জন্য মাধ্যম প্রদান করে।
নাসার এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে চন্দ্র এক্স-রে সেন্টারে (CXC) তত্ত্বাবধানে এবং NASA-এর হাবল স্পেস টেলিস্কোপ/গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের অতিরিক্ত সহায়তায়। এটা NASA র ইউনিভার্স অফ লার্নিং (UoL) প্রোগ্রামের অংশ।