গল্প লেখার সময় কিভাবে বিভিন্ন ধরণের পয়েন্ট অফ ভিউ ব্যাবহার করতে হয়: নির্দেশিকা

words have power artwork
সাহিত্যে, লেখকের বর্ণনার দৃষ্টিভঙ্গি বা ন্যারেটিভ পয়েন্ট অফ ভিউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন জেনেনি, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে গল্প কবিতা লেখার জন্য ফার্স্ট পারসন, সেকেন্ড পারসন, থার্ড পারসন পয়েন্ট অফ ভিউ কিভাবে ব্যাবহার করতে হয়।

Share This Post

সাহিত্যে, লেখকের বর্ণনার দৃষ্টিভঙ্গি বা ন্যারেটিভ পয়েন্ট অফ ভিউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কল্পকাহিনী লেখার সময় পয়েন্ট অফ ভিউ অনেক রকম ভাবে ব্যাবহার করা যায়। বাংলা ব্যাকরণে একেই উত্তম পুরুষ (First Person), মধ্যম পুরুষ (Second Person) ও প্রথম পুরুষ (Third Person) বলা  হয়। মনে রাখতে হবে বাংলা ব্যাকরণ অনুযায়ী যেটা প্রথম পুরুষ, সেটাই ইংরেজির থার্ড পারসন। একজন ভালো লেখ্‌ সবসময় একজন ভালো গল্প বলিয়ে হন। বলা হয়, ভালো লেখকরা গল্প লেখেন ন; গল্প বলেন। লেখকের গল্প বলার দক্ষতাই লেখকের সাথে পাঠকের সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। ন্যারেটিভ পয়েন্ট অফ ভিউ এর সঠিক ব্যবহার পাঠককে গল্পে বর্ণিত আবেগের সাথে রিলেট করতে সাহায্য করে। আসুন জেনে নিন, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, গল্প কবিতা লেখার সময় ফার্স্ট পারসন, সেকেন্ড পারসন, থার্ড পারসন পয়েন্ট অফ ভিউ কিভাবে ব্যাবহার করতে হয়।

ফার্স্ট পার্সন বর্ণনা (First Person Narrative):

লেখক যখন কোন ঘটনা বর্ণনা করছেন, যদি তিনি গল্পের একটি চরিত্র হন এবং তিনি তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন, তবে তিনি ফার্স্ট পার্সনে বর্ণনা করছেন।

 

উদাহরণ: “এই মাত্র অফিস থেকে ফিরলাম। খুব টায়ার্ড লাগছে। এদিকে কখন থেকে কলিং বেল বাজাচ্ছি, কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।”

থার্ড পার্সন বর্ণনা (Third Person Narrative):

একইভাবে যখন লেখক গল্পের চরিত্র নন, তখন তিনি তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করেন। এখানে, একজন তৃতীয় ব্যক্তি অন্য কারো গল্প বর্ণনা করেছেন। 

 

উদাহরণ: “জুয়েল বাবু এই মাত্র অফিস থেকে ফিরলেন। ওনার খুব টায়ার্ড লাগছে। এদিকে উনি কখন থেকে কলিং বেল বাজাচ্ছেন, কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।”

সেকেন্ড পার্সন বর্ণনা (Second Person Narrative) :

সেকেন্ড পার্সন পয়েন্ট অফ ভিউ ব্যবহার করা হয় যখন লেখক সরাসরি পাঠকের সাথে কথা বলেন। এখানে দুটো চরিত্র, লেখক, যিনি বক্তা; এবং পাঠক বা শ্রোতা। পাঠক দ্বিতীয় চরিত্রে পরিণত হয়, যার সাথে লেখক কথা বলছেন। লেখক পাঠককে আপনি বা তুমি বলে সম্বোধন করেন।

 

উদাহরণ: “আমি এই মাত্র অফিস থেকে ফিরেছি। আমার খুব টায়ার্ড লাগছে জানো? এদিকে কখন থেকে কলিং বেল বাজাচ্ছি, কিন্তু তুমি দরজা খুলছো না।”

অমনিসেয়েন্ট পয়েন্ট অফ ভিউ:

থার্ড পার্সন বর্ণনা লেখার সময় যদি দেখা যায়, লেখক, বিভিন্ন চরিত্রের মনের কথাও বলতে পারছেন। অর্থাৎ, গল্পের চরিত্র গুলোর মস্তিস্কে লেখকের অবাধ প্রবেশ। তাহলে বুঝতে হবে যে, লেখক অমনিসেয়েন্ট পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে লিখছেন। এক্ষেত্রে লেখক তার গল্প এবং গল্পের চরিত্র সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। তিনি গল্পের চরিত্রদের যতটা চেনেন, ততটা তারা নিজেরাও নিজেদের চেনেনা।

লিমিটেড পয়েন্ট অফ ভিউ:

থার্ড পার্সন বর্ণনা লেখার সময় যদি লেখক সীমিত দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাবহার করেন, তাহলে বুঝতে হবে, তিনি লিমিটেড থার্ড পারসন পয়েন্ট অফ ভিউ ব্যবহার করছেন। এক্ষেত্রে, লেখক গল্পের চরিত্রদের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করেন। কিন্তু লেখক চরিত্র গুলোর মস্তিস্কে প্রবেশ করতে পারেন না।

থার্ড পার্সন অবজেক্টিভ পয়েন্ট অফ ভিউ:

থার্ড পার্সন বর্ণনা লেখার সময় লেখক অবজেক্টিভ থাকতে পারেন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে লেখক কোন চরিত্রের চারিত্রিক বিশ্লেষণ করেন না। তিনি চরিত্র গুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ এবং যথাসম্ভব তথ্য পাঠকের সামনে তুলে ধরেন। বাকিটা পাঠকের উপর ছেড়ে দেন।

কল্পকাহিনী লেখার সময় কিভাবে সঠিক পয়েন্ট অফ ভিউ নির্বাচন করবেন :

কোন লেখার জন্য কোন পয়েন্ট অফ ভিউ সব থেকে ভাল সেটা নির্ধারণ করা বেশ কঠিন। এটা রপ্ত করার জন্য প্রয়োজন অনুশীলন। লিখতে লিখতে আয়ত্তে আসবে। দেখতে হবে কোন পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে গল্পটা বললে, সবথেকে ভাল শোনাচ্ছে। আরও আকর্ষণীয় শোনাচ্ছে। কোন পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে গল্পের প্রেক্ষাপট, মুল ভাবধারা, ঘটনা প্রবাহ সবথেকে ভাল ফুটে উঠছে।  সঠিক পয়েন্ট অফ ভিউ নির্ধারণ করার জন্য লেখক কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করতে পারেন।

বিভিন্ন পয়েন্ট অফ ভিউ ব্যবহার করে দেখুন:

সঠিক পয়েন্ট অফ ভিউ নির্ধারণ করার একমাত্র উপায় হল বিভিন্ন পয়েন্ট অফ ভিউ ব্যবহার করে দেখা কোনটা সবথেকে ভাল লাগছে। নতুন গল্প বা কবিতা লেখা শুরু করার সময়ই বিভিন্ন পয়েন্ট অফ ভিউ ব্যবহার করে এটা আগে নির্ধারণ করে নিতে হবে।

পয়েন্ট অফ ভিউ-এর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন হন:

সঠিক ভাবে গল্পের চরিত্র গুলোকে ফুটিয়ে তোলার জন্য সঠিক পয়েন্ট অফ ভিউ-এর ব্যবহার অপরিহার্য। মনে রাখবেন, আপনি পাঠকের চোখের সামনে গল্পে ঘটে যাওয়া ঘটনা বর্ণনা করছেন এবং গল্পের চরিত্ররা কি ভাবছেন এবং অনুভব করছেন তা জানাচ্ছেন। পাঠকের মনে গল্পের ঘটনা সিনেমার মত ফুটিয়ে তুলতে হলে যে পয়েন্ট অফ ভিউ ব্যাবহার করছেন তার সীমাবদ্ধতা গুলো মাথায় রেখে লিখতে হবে। এক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত মিশ্রণ এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ।

স্ব-মূল্যায়ন এড়িয়ে চলুন:

যেহেতু সৃজনশীল সৃষ্টি সর্বদাই আনন্দদায়ক এবং লেখক নিজে এই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত থাকেন তাই লেখকের উচিৎ স্ব-মূল্যায়ন এড়িয়ে চলা। নিয়মিত অন্যদের নিজের লেখা পাঠ করে শোনান এবং মতামত নিন।

অনুশীলন:

নিয়মিত লেখার অভ্যাস করুন এবং সঙ্গে অন্য লেখকদের লেখা পড়ুন। একই লেখা ফার্স্ট পার্সন আর থার্ড পার্সন দুভাবে লিখে পাঠ করুন। তাহলে আপনি হাতে-কলমে পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।

Ⓒ Jewel Chanda

Author

  • জুয়েল চন্দ

    Advocate Jewel Chanda is an accomplished legal professional with over 15 years' experience in the legal field. He has served as a Judge for 10 years in the West Bengal Judiciary and is currently practicing before the High Court at Calcutta and in various Trial Courts of the District Judiciary. A Gold Medalist, Mr. Chanda holds two Bachelor's degrees, one of which is Law, along with four Master's degrees in Law (Criminology), Business Law, Environment & Development and Sociology. He is also a Doctoral Research Scholar of Jindal Global Law School whose research area focuses on Artificial Intelligence and Law. With exceptional expertise in both civil and criminal litigations including family matters and property matters, Advocate Chanda is highly trained to handle trials, appeals and revisions. He is well-versed in all aspects of the law and litigation, making him an invaluable asset to protect the legal rights of the poor and weaker section of the society. Contact Advocate Chanda at jewelchanda@gmail.com

    View all posts

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore