বাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” পর্ব – ১, কোভিড – ৫০

২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য
২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য, বাংলা ভাষায় লেখা একটি কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কল্পবিজ্ঞানের এই উপন্যাসিকাটি লক্ষাধিক পাঠক পড়েছেন। এই গল্পে সহজ বাংলা ভাষায় জটিল বিজ্ঞান উপস্থাপন করা হয়েছে । কিন্তু কল্পনার মোড়কে। এই গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে 'সৃষ্টি রহস্য'। এই রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে মিশে গেছে বেদ আর বিজ্ঞান। তাই এটা শুধুমাত্র একটা নিছক কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয় । বরং আমি বলব, এটা কল্প-ধর্মবিজ্ঞান।

Share This Post

এই উপন্যাসিকাটি বাংলায় লেখা হলেও সামান্য কিছু ইংরেজি শব্দ বাধ্য হয়েই ব্যবহার করতে হয়েছে। তবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য ইংরেজি শব্দগুলো বাংলা হরফে লেখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পড়ুন এবং ভাল লাগলে শেয়ার করুন। মোট ১৩-টি পর্ব, আগামী ১৩ দিনে আপলোড করা হবে, মেটা সিরিজ হিসেবে, যা আপনি পড়তে পারবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

পর্ব-এক
কোভিড - ৫০

মেয়েটা ভাবলেশহীন মুখে বলল, “এ ছাড়া উপায় নেই, বাচ্চাটা একেবারে নেতিয়ে পড়েছে।”

সুকুমার স্পষ্ট বুঝতে পারছে হাতে আর বেশিক্ষণ সময় নেই। সময় নষ্ট করলে বাচ্চাটাকে আর বাঁচানো যাবে না। মনে পড়ে যাচ্ছে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের কথা। করোনার আক্রমণ বিশ্বের তাবড় তাবড় উন্নত দেশগুলোকে শুইয়ে দিয়েছে। মানুষ ঘন্টা বাজিয়ে আর আলো জ্বালিয়ে জানান দিচ্ছে, আমরা আছি, আমরা লড়াই করছি। সুকুমার তখন বছর কুড়ির যুবক আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) তখন হাটি হাটি পা পা। মানব সভ্যতার তখন শম্বুক দশা। সেই দিনটার কথা সুকুমারের স্পষ্ট মনে আছে। দীর্ঘদিন গৃহবন্দী হয়ে মানসিকভাবে তখন সে বিধ্বস্ত, ক্লান্ত। সুকুমারের ইচ্ছে করছিল সব নিয়ম ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে এক ছুটে চলে যায় পরিণীতার কাছে। আর তো কিছু সে করতে পারত না, শুধু পাশে থাকা। চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকা আর বুঝিয়ে দেওয়া আমি আছি তোমার পাশে। সেদিন সমস্ত নিউজ চ্যানেলে একটাই খবর,

“করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন বিখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন ডাক্তার মন্ডল।”

পরিণীতার বাবা। ঘটনাক্রমে সেটাই ছিল এ রাজ্যের সহস্রতম করোনার শিকার। কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে পরিণীতার বাবার পরিচিতি ছিল গোটা বিশ্ব জুড়ে। সপ্তাহখানেক আগে উনি ফিরেছিলেন লন্ডন থেকে একটা কনফারেন্স করে। করোনার লক্ষণ দেখা দিতেই উনি হাউসিং ছেড়ে স্বেচ্ছায় সপরিবারে চলে গেছিলেন সরকারি কোয়ারান্টাইন হাউসে।

সুকুমারের মনের অবস্থা তখন ঠিক কী রকম ছিল সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত দখল আমার বাংলা ভাষার উপর নেই। এদিকে পরিণীতার ফোন সুইচড অফ, ওদিকে নিউজ চ্যানেল গুলো একটানা বলে চলেছে,

“নিহত ডাক্তার মন্ডলের একমাত্র কন্যা পরিণীতা মন্ডল এর অবস্থা সংকটজনক।”

সুকুমার ঠায় বসে ছিল টিভির সামনে। ভাবলেশহীন মুখে, চোখ দুটো খোলা রেখে। সেদিন পয়লা এপ্রিল। ভোর তখন তিনটে। টিভি স্ক্রিনে ফুটে উঠলো ব্রেকিং নিউজ, “করোনার সাথে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেল অষ্টাদশী পরিণীতা”

স্তব্ধ হয়ে গেছিল গোটা রাজ্য। তখন পর্যন্ত সকলের ধারণা ছিল করোনা শুধু বয়স্ক মানুষের জীবনহানি ঘটাতে পারে। ভয় পেয়েছিল নিয়ম ভাঙ্গা বেপরোয়া লোকজন। পুলিশ প্রশাসন হাজার চেষ্টা করেও যা পারেনি, পরিণীতার মৃত্যু মানুষকে সেই শিক্ষাটা দিয়ে গিয়েছিল। মানুষ ভয় পেয়েছিল। সেদিন থেকে আর কাউকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়নি। আর সুকুমারকে টানা সাতদিন নড়ানো যায়নি টিভির সামনের সোফাটা থেকে। সুকুমার টানা সাত দিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল টিভির দিকে একবার যদি বলে খবরটা মিথ্যে, একবার যদি বলে ওটা এপ্রিলফুল ছিল। সে যুদ্ধটা অবশ্য শেষমেষ গৃহবন্দি মানুষই জিতেছে। কিন্তু ততদিনে নড়ে গেছে অর্থনীতির ভিত। পাল্টে গেছে বহু মানুষের জীবন।

 

সাতদিন পরে যখন সুকুমার সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো, তখন তার জীবনের একটাই উদ্দেশ্য, যুদ্ধ। বিশ্ব মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আর সেযুদ্ধে সুকুমারের অস্ত্র ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

Breaking News in TV

“এত ভাবছেন কি, তাড়াতাড়ি করুন না হলে বাচ্চাটাকে আর বাঁচানো যাবে না।”

“না, মানে ভাবছিলাম কোন বেটার উপায় আছে কিনা।” ইতস্তত ভাবে বলে সুকুমার মেয়েটার দিকে আড়চোখে চোখে তাকালো। মেয়েটার বয়স কুড়ির কাছাকাছি। মুখটা অবিকল পরিণীতার মতন। ভাগ্যের কী অদ্ভুত পরিহাস।

সেদিন সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যে প্রতিজ্ঞা সুকুমার করেছিল তা আজ অব্দি সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। সুকুমার থেকে ডক্টর সুকুমার দাস হয়েছে। ডক্টর সুকুমার দাস বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে রক্ষা করে এসেছে মানবজাতিকে। ডক্টর সুকুমার দাস এই যুদ্ধে অপরাজেয়। তার গবেষণা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে করে তুলেছে মানুষের সর্বময় রক্ষাকর্তা, আর ডক্টর সুকুমার দাস কে মানুষ বসিয়েছে ভগবানের আসনে। গত পঞ্চাশ বছরে কোন ভাইরাস মহামারীর আকার ধারণ করতে পারেনি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ডক্টর সুকুমার দাস ধরে ফেলেছে ভাইরাসের আগাম গতিবিধি। বলে দিয়েছে কোন পথে এগোলে দ্রুত মিলবে প্রতিষেধক বানানোর গবেষণায় সাফল্য। প্রকৃতির নিয়ম কানুন হার মেনেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে।

ভাগ্যের কী অদ্ভুত পরিহাস, আজ সেই ভগবানেরই স্বয়ং ধর্মসংকট।

 

(চলবে………….. পড়ুন পরবর্তী পর্ব – বিপদ)

Series Navigationবাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” পর্ব – ২, ‘বিপদ’ >>

Author

  • জুয়েল চন্দ

    Advocate Jewel Chanda is an accomplished legal professional with over 15 years' experience in the legal field. He has served as a Judge for 10 years in the West Bengal Judiciary and is currently practicing before the High Court at Calcutta and in various Trial Courts of the District Judiciary. A Gold Medalist, Mr. Chanda holds two Bachelor's degrees, one of which is Law, along with four Master's degrees in Law (Criminology), Business Law, Environment & Development and Sociology. He is also a Doctoral Research Scholar of Jindal Global Law School whose research area focuses on Artificial Intelligence and Law. With exceptional expertise in both civil and criminal litigations including family matters and property matters, Advocate Chanda is highly trained to handle trials, appeals and revisions. He is well-versed in all aspects of the law and litigation, making him an invaluable asset to protect the legal rights of the poor and weaker section of the society. Contact Advocate Chanda at jewelchanda@gmail.com

    View all posts

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore