বাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” শেষ পর্ব – ১৩, ‘জীবনচক্র’

Indian Sadhu Artwork
এই মেয়েটা একটু যেন রুক্ষ। হঠাৎ ছবিটা চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যায়। মেয়েলি স্পর্শের অনুভূতি ওনাকে ফিরিয়ে আনে চেতনার জগতে। ওনার মনে হয় ওনার গায়ে কেউ হাত বোলাচ্ছে। ডক্টর সুকুমার চোখ খুলেই চমকে ওঠেন। পড়ছেন "২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য শেষ পর্ব।

Share This Post

২০৭০ ব্রহ্ম : পরম সত্য : শেষ পর্ব : 'জীবনচক্র'

আজ পয়লা এপ্রিল 2070। ডক্টর সুকুমার একটা প্রাণহীন শহরের মাঝখানে চওড়া রাস্তার ধারে একটা গাছের তলায় বসে আছেন। উনি ইচ্ছে করেই এখানটায় বসেছেন। এখান থেকে কোন মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে না। উনি মনে মনে ঠিক করেন, এই শহর ছেড়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়তে হবে। যেতে হবে অন্য কোন শহরে। প্রাণের সন্ধানে। কিন্তু কোন দিকে যাবেন? আজকাল মাথাটা সব সময় কাজ করে না। মাঝে মাঝে মনে হয় সময় থমকে গেছে। ডক্টর সুকুমার খেয়াল করলেন যে গাছটার নিচে উনি বসে আছেন সেটা একটা বিরাট অশ্বত্থ গাছ। এইরকমই একটা অশ্বত্থ গাছের তলায় বসে টানা উনপঞ্চাশ দিন ধ্যান করার পর গৌতম বুদ্ধ বোধি প্রাপ্ত হয়েছিলেন। উনি পদ্মাসনে বসে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলেন, এরপর কি করনীয়। হঠাৎ ওনার মনে হল, যদি সত্যিই এই পৃথিবীতে আর কেউ বেঁচে না থাকে! যদি গোটা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে তিনি একাই জীবিত প্রাণী হন! উনি একমনে দুই ভুরুর মাঝখানে সেই নীল আলোকবিন্দুটা খোঁজার চেষ্টা করেন। ওনার শ্বাস-প্রশ্বাস একটা নির্দিষ্ট ছন্দে চলতে থাকে। বহু বহু দূরে অবস্থিত এক অসীম বিন্দু থেকে উদ্ভূত কম্পন ধরা পড়ছে ওনার আজ্ঞা চক্রে। ওনার বন্ধ চোখের সামনে ভেসে ওঠে আবছা একটা ছবি। ধীরে ধীরে ঝাপসা ভাবটা কেটে যায়। উনি পরিষ্কার দেখতে পান, বছর কুড়ির একটা মেয়ে। কোলে একটা সদ্যোজাত শিশু। মেয়েটার মুখটা অবিকল পরিণীতার মতন। তবে পরিণীতার সঙ্গে এই মেয়ের বিস্তর অমিল। পরিণীতা ছিল ধবধবে ফর্সা, আর এই মেয়ে কৃষ্ণবর্ণা। এই মেয়েটা একটু যেন রুক্ষ। হঠাৎ ছবিটা চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যায়। মেয়েলি স্পর্শের অনুভূতি ওনাকে ফিরিয়ে আনে চেতনার জগতে। ওনার মনে হয় ওনার গায়ে কেউ হাত বোলাচ্ছে। ডক্টর সুকুমার চোখ খুলেই চমকে ওঠেন।

মেয়েটা, “ও মাগো”, বলে ছিটকে সরে যায়।

ডক্টর সুকুমার অবাক হয়ে দেখেন, একটু আগে মনের আয়নায় ফুটে ওঠা মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে চোখের সামনে। মেয়েটা বলে ওঠে, “আর একটু হলেই হার্ট ফেল করতাম। আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।”

বিশ্বাস অবশ্য ডক্টর সুকুমারেরও হচ্ছে না। উনি চোখ দুটো বন্ধ করে আবার খোলেন। নাহ্, মেয়েটা জল জ্যান্ত চোখের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।

“আমার নাম মোহিনী।”

ডক্টর সুকুমার আনমনা হয়ে যান। ‘মোহিনী’, খুব চেনা চেনা নাম। বিষ্ণুর একমাত্র নারী অবতার। যার প্রেমের প্রলোভনে পাগল হয়ে গিয়ে প্রেমিকেরা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলে। যাকে দেখে স্বয়ং শিবেরও কাম স্খলন ঘটে।

ওম মোহিনী আর হনুমান

“আমার নাম ‘ওম’। অবশ্য আমার দুটো নাম। একটা ভেতরের নাম, একটা বাইরের নাম। বাইরের আমিটার নাম, সুকুমার, আর ভিতরের আমিটার নাম, ‘ওম’। কমপ্লিকেটেড ব্যাপার, ও তুমি বুঝবে না।”

“ওমা এতে না বোঝার কি আছে। অনেকেরই দুটো নাম থাকে, একটা ভালো নাম আর একটা ডাকনাম। আমার অবশ্য একটাই নাম। বাইরেরটাও মোহিনী, ভেতরেরটাও মোহিনী।

 

‘ওম’ ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে, বলে, “তাড়াতাড়ি চলো। হাতে আর বেশি সময় নেই।”

মোহিনী কিছুই বুঝতে পারে না। সে অবাক হয়ে বলে, “কোথায়?”

“আরেকজন বেঁচে আছে। একটা বাচ্চা। এক্ষুনি না গেলে। ওকে আর বাঁচানো যাবে না।”

 

“বাচ্চা? কোথায়?”

ততক্ষনে ‘ওম’ হনহন করে হাঁটতে শুরু করেছে। মোহিনী পিছন পিছন যেতে যেতে প্রশ্ন করে, “কোথায় আছে বাচ্চাটা? আর আপনিই বা জানলেন কি করে যে বেঁচে আছে?”

“এগজ্যাক্টলি ঠিক কোথায় আছে জানি না। তবে আশেপাশেই কোথাও আছে।”

 

‘ওম’ ততক্ষনে দাঁড়িয়ে পড়েছে। চোখ বন্ধ করে কি একটা বোঝার চেষ্টা করছে। 

মোহিনী বলে ওঠে, “আচ্ছা, আপনি কি চোখ বন্ধ করে সবকিছু দেখতে পান?”

“সবকিছু না। তবে কিছু কিছু জিনিস দেখতে পাই।”

 

মোহিনী অবাক হয়ে ‘ওম’ -এর দিকে তাকিয়ে থাকে। 

“বিশ্বাস হচ্ছে না?”

“না, তার জন্য নয়।”

“তবে?”

“আমিও চোখ বন্ধ করলে কিছু কিছু জিনিস দেখতে পাই। এই যেমন, আজ সকালে দেখতে পেয়েছিলাম। ওই অশ্বত্থ গাছটা। যার নিচে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন আপনি।”

 

‘ওম’ আর মোহিনী, শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে গভীর জঙ্গলের দিকে। ওদের পিছন পিছন যাচ্ছে একটা ছোট্ট বাচ্চা। না, মানুষের বাচ্চা নয়। ছোট্ট একটা হনুমানের বাচ্চা। অগ্নি পুরাণ আর শিব পুরাণ অনুযায়ী মোহিনীকে দেখে শিবের কামস্খলন ঘটে এবং জন্ম হয় হনুমানের। 

চারিদিকে পচন ধরতে শুরু করেছে। শুরু হবে নতুন জীবন চক্র।

 

ওদিকে সুদূর আফ্রিকার জঙ্গলে, অন্ধকার গুহায় অপেক্ষা করছে আরো একজন।

।।সমাপ্ত।।

Copyright © Jewel Chanda

Series Navigation<< বাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” পর্ব – ১২, ‘ঈশ্বর পাশা খেলেন’

Author

  • জুয়েল চন্দ

    Advocate Jewel Chanda is an accomplished legal professional with over 15 years' experience in the legal field. He has served as a Judge for 10 years in the West Bengal Judiciary and is currently practicing before the High Court at Calcutta and in various Trial Courts of the District Judiciary. A Gold Medalist, Mr. Chanda holds two Bachelor's degrees, one of which is Law, along with four Master's degrees in Law (Criminology), Business Law, Environment & Development and Sociology. He is also a Doctoral Research Scholar of Jindal Global Law School whose research area focuses on Artificial Intelligence and Law. With exceptional expertise in both civil and criminal litigations including family matters and property matters, Advocate Chanda is highly trained to handle trials, appeals and revisions. He is well-versed in all aspects of the law and litigation, making him an invaluable asset to protect the legal rights of the poor and weaker section of the society. Contact Advocate Chanda at jewelchanda@gmail.com

    View all posts

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore