বাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” পর্ব – ২, ‘বিপদ’

আপনি পড়ছেন ২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য, বাংলা ভাষায় লেখা একটি কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকার দ্বিতীয় পর্ব - বিপদ । বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কল্পবিজ্ঞানের এই উপন্যাসিকাটি লক্ষাধিক পাঠক পড়েছেন। এই গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে 'সৃষ্টি রহস্য'। এই রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে মিশে গেছে ধর্ম আর বিজ্ঞান।

Share This Post

পর্ব- দুই
বিপদ

ইউনিভার্সাল কমপিউটিং সিস্টেম (ইউ.সি.এস) চালু হবার পর থেকে কখনো এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। ইউনিভার্সাল কম্পিউটিং সিস্টেমের আইডিয়াটাও ডক্টর সুকুমার দাস এর মাথাতেই প্রথম আসে। সে সময় অনেকেই এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। আবার অনেকের ধারণা ছিল অতিমানবীয় ক্ষমতা সম্পন্ন ইউনিভার্সাল কম্পিউটার এক সময় মানুষকেই অগ্রাহ্য করবে। তেমনটা অবশ্য হয়নি। কারণ পৃথিবীর সমস্ত সুপার কম্পিউটার আর ক্লাউড কম্পিউটিং প্লাটফর্ম গুলোকে একসাথে জুড়ে দিয়ে ইউ.সি.এস চালু করার আগেই ডক্টর সুকুমার দাস সমস্যার সমাধান ভেবে রেখেছিলেন। তা না হলে মানব মস্তিষ্কের থেকে লক্ষ কোটি গুণ বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ইউ.সি.এস-এর মানুষের নির্দেশ অগ্রাহ্য করা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে ইউ.সি.এস চালু না হলে মানুষ নামের প্রাণীটা এতদিনে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেত। গোড়ার দিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যত পরিণত হয়েছে, এর যথেচ্ছ ব্যবহারে মানুষ তত অপরিণত বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। 2040 সাল নাগাদ পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা কিছু ক্ষেত্রে তখন মানব মস্তিষ্কের সমান সমান। আর ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের দৌলতে তার ক্যালকুলেটিং পাওয়ার অসীম। এহেন অতিমানবীয় ক্ষমতা সম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুঁজিবাদের দৌলতে তখন মানুষের ঘরে ঘরে। সেটা ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বর্ণযুগ। যার পেটে বিদ্যা নেই সেও তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে জিনের রদবদল ঘটিয়ে কুকুরের ডানা গজাচ্ছে। প্রতিটা মানুষের ভেতরে যে একটা কালিদাস লুকিয়ে আছে সেটা সে সময় বেশ টের পাওয়া যাচ্ছিল। চারিদিকের চরম অরাজকতা। কলিযুগের শেষ দিকে ঠিক যেমন হওয়ার কথা অনেকটা সেই রকম। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মিলেনিয়াল টেরোরিস্টের দল। এদের নতুন মতবাদ ‘ধ্বংসের মধ্যে সৃষ্টি’। এদের মূল উদ্দেশ্যই হলো পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে ফেলা। পৃথিবীটাকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে আর বেশিদিন সময় লাগত না, যদিনা সঠিক সময় ডক্টর দাস গ্রেট এনট্যাঙ্গলমেন্ট এর প্রস্তাবটা আনতেন।

বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সভা। পৃথিবীর সেরা পঞ্চাশ জন বৈজ্ঞানিক উপস্থিত। এই সভায় যা সিদ্ধান্ত হবে তা অমান্য করার ক্ষমতা কোন রাষ্ট্রপ্রধানেরও নেই। প্রধান বক্তা ডক্টর সুকুমার দাস ব্যাখ্যা করছেন ‘দা থিওরি অফ গ্রেট এনট্যাঙ্গলমেন্ট’। বাকিরা সকলেই অল্পবিস্তর উত্তেজিত। বেশিরভাগই ডক্টর দাস এর সাথে সহমত নয়। উপস্থিত আফ্রিকান বৈজ্ঞানিক ওগাবু। পদমর্যাদায় যিনি দু’নম্বর। ডক্টর সুকুমার দাস এর পর ওনার কথাতেই সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেয় বৈজ্ঞানিককুল।

Universal Computing System Artwork

“সুকুমার তুমি বলছো পৃথিবীর সমস্ত সুপার কম্পিউটার গুলোকে আর ক্লাউড-কম্পিউটিং প্লাটফর্ম গুলোকে একসাথে জুড়ে দিয়ে ইউনিভার্সাল কম্পিউটিং সিস্টেম চালু করতে। পৃথিবীতে একটাই মাত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ইউনিভার্সাল কম্পিউটিং সিস্টেম থাকবে। নো পার্সোনাল কম্পিউটার। সাধারণ মানুষ আর ক্লাউড কম্পিউটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবে না। একটা সিঙ্গেল ইউনিফাইড সিস্টেম। এতো গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া। অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটা সিস্টেম, যে কিনা হেলায় পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। যার তুলনায় মানুষের বুদ্ধিমত্তা নগণ্য। সে আজ বাদে কাল মানুষের কথা অমান্য করবে না তার কি গ্যারান্টি? এমন একটা বুদ্ধিমান সিস্টেমকে কন্ট্রোল করার কোন উপায়ই তো মানুষের হাতে থাকবে না।”

“উপায় আছে। একেবারে ফুলপ্রুফ। এনট্যাঙ্গলমেন্ট।”

“এনট্যাঙ্গলমেন্ট?”

“ইয়েস। এনট্যাঙ্গলমেন্ট অফ হিউম্যান ব্রেইন উইথ দা ইউনিভার্সাল কম্পিউটিং সিস্টেম। ইউ. সি.এস কোন আলাদা সিস্টেম হবে না। ধরে নাও তোমার মস্তিষ্কের সাথে এই ইউ.সি.এস-কে জুড়ে দেওয়া হল। তাহলে ইউ.সি.এস-এর আলাদা কোনো নিজস্বতা থাকবে না। ওটা তোমার মস্তিষ্কেরই অতিরিক্ত ক্ষমতা হিসেবে কাজ করবে। সে ক্ষেত্রে ইউ.সি.এস কখনো তোমার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কিছু করতে পারবে না। আমাদের এই পৃথিবীটাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর এ ছাড়া কোন উপায় নেই।”

সেদিন সেই সভার সিদ্ধান্ত ডক্টর সুকুমার দাস এর প্রস্তাবের পক্ষেই গেছিল আর তারপর থেকে আজ অব্দি ইউ.সি.এস-এর দৌলতে মানুষকে কোনো সমস্যার সমাধান করতে হয়নি। আসলে ইউ.সি.এস কোন সমস্যার উদ্ভবই হতে দেয়নি।

কিন্তু সব হিসেব ওলট-পালট হয়ে গেল পয়লা জানুয়ারি 2070। ডক্টর দাস স্লিপ মডুলেটর এর ভিতরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বাইরে তখন বিশ্বজুড়ে চলছে বর্ষবরণের উৎসব।

“ওয়েক আপ ডক, ইটস অ্যান এমার্জেন্সি।”

যদিও ডক্টর দাস তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওনার সেনসরি অর্গান গুলো তখনও জেগে ওঠেনি। তবুও ডঃ দাস শুনতে পাচ্ছেন। ওনার মস্তিষ্কের ভিতর কে যেন ক্রমাগত বলে চলেছে, “ওয়েক আপ ডক, ইটস অ্যান এমার্জেন্সি।”

আমরা অনেকেই ভাবি আমরা কান দিয়ে শুনি। আসলে আমরা কান দিয়ে শুনি না। কানে শুধু বাতাসের কম্পন ধরা পড়ে। সেই কম্পন থেকে নির্দিষ্ট প্যাটার্ন খুঁজে বার করে অর্থপূর্ণ শব্দ শোনায় আমাদের মস্তিষ্ক। ইউ.সি.এস-কে তাই মানুষের সাথে কথা বলতে কানের উপর নির্ভর করতে হয় না। স্বল্প দৈর্ঘের মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন স্থাপনের প্রযুক্তি ততদিনে অনেক পুরনো হয়ে গেছে।

স্লিপ মডুলেটর এর স্বয়ংক্রিয় ঢাকনা খুলে গেছে।বডি টেম্পারেচার নরমাল হচ্ছে। ডঃ দাস ঘুম থেকে উঠেই বুঝলেন কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ইউ.সি.এস থেকে ততক্ষণে বিপদবার্তা পাঠানো শুরু হয়ে গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। তার ল্যাবরটরি দেয়ালজোড়া স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে লাল লাল বিন্দু। একটা দুটো নয়, হাজার হাজার লাল রংয়ের বিন্দুতে ভরে যাচ্ছে পৃথিবীর ম্যাপ। কোভিড-50। ইউ.সি.এস তাকে এই নামটাই দিয়েছে। অ্যানালিসিস স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ডক্টর দাসের মাথা ঘুরে যাবার উপক্রম। বায়ুবাহিত, মারন ক্ষমতা একশো শতাংশ। গত দশ বছরে এই প্রথম ইউ.সি.এস জানিয়ে দিচ্ছে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করার উপায় তার জানা নেই।

(চলবে……………… পড়ুন পরবর্তী পর্ব- সংকেত)

Series Navigation<< বাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” পর্ব – ১, কোভিড – ৫০বাংলা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসিকা; “২০৭০ : ব্রহ্ম : পরম সত্য” পর্ব – ৩, ‘সংকেত’ >>

Author

  • জুয়েল চন্দ

    Advocate Jewel Chanda is an accomplished legal professional with over 15 years' experience in the legal field. He has served as a Judge for 10 years in the West Bengal Judiciary and is currently practicing before the High Court at Calcutta and in various Trial Courts of the District Judiciary. A Gold Medalist, Mr. Chanda holds two Bachelor's degrees, one of which is Law, along with four Master's degrees in Law (Criminology), Business Law, Environment & Development and Sociology. He is also a Doctoral Research Scholar of Jindal Global Law School whose research area focuses on Artificial Intelligence and Law. With exceptional expertise in both civil and criminal litigations including family matters and property matters, Advocate Chanda is highly trained to handle trials, appeals and revisions. He is well-versed in all aspects of the law and litigation, making him an invaluable asset to protect the legal rights of the poor and weaker section of the society. Contact Advocate Chanda at jewelchanda@gmail.com

    View all posts

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore