বাংলা ছোট গল্প: কেচ্ছা

8, March, International Womens Day

Share This Post

এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে দুজন পুরুষ মানুষ। অনেকের মনে হতে পারে নারী দিবসে কেন এরকম গল্প। আসলে এই গল্পে কেন্দ্রে একজন নারীর উপস্থিতি গল্পের কারণে না থেকেও আছে। প্রত্যক্ষভাবে কোন নারী চরিত্র না থাকলেও, এই গল্পে নারী সম্পর্কে পুরুষ মানুষের ভাবনা চিন্তা আছে। তাই ভাবলাম আন্তর্জাতিক নারী দিবসেই লেখাটা পোস্ট করি। গল্পের নাম “কেচ্ছা”।
আমি লেখার সময় চেষ্টা করি যতটা সম্ভব, যা শুনেছি যা দেখেছি, সেটাই উপস্থাপন করতে। চেষ্টা করি যতটা সম্ভব নিজের ব্যক্তিগত মতামত দূরে সরিয়ে রাখতে। যাতে করে গল্পের চরিত্রগুলো হাইলাইট হয়।
তবে ট্র্যু স্টোরি বলে কিছু হয়না। যেটা হয় সেটা হলো সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত গল্প। তবে সেটা যদি একেবারে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি গল্প হয়, তাহলে প্রথমেই বলে রাখা ভাল, এই গল্প সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এই গল্পের স্থান-কাল-পাত্র ঘটনাক্রম সবটাই কল্পনার মোড়কে লেখা। কেউ যদি কোনো মিল খুঁজে পান, তাহলে বুঝবেন সেটা একেবারে কাকতালীয়।
Two young women watching scandal
কেচ্ছা আমাদের খুব ভালো লাগে। কেচ্ছার একটা নিজস্ব মার্কেট আছে। কোথাকার কোন বাড়ির দুই বউ রাজমিস্ত্রির সঙ্গে পালিয়ে গেছে। আমরা কিন্তু তাদের কাউকে চিনি না। কিন্তু আমরা ব্যাপারটা নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ি।
তবে এই গল্পটা, কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির গল্প হলেও, উচ্চ মার্গের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি। এটা ওই রিক্সাওয়ালার সাথে ট্যাক্সিওয়ালার বউ পালিয়ে যাওয়ার গল্প নয়। এখানে বাদী-প্রতিবাদী দুই পক্ষই শিল্পী মানুষ। আপনারা আবার ভাববেন না শিল্পী কথাটাকে আমি গালাগালি হিসেবে ব্যবহার করছি। এই গল্পটা শুরু করছি দুই শিল্পীর ফোনালাপ থেকে। তবে গল্পের ভূমিকা শুরু হয়ে গেছিল তার অনেক আগে। দুই শিল্পীই নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বনামধন্য। সমাজে তাদের একটা পরিচিতি আছে। সেটা যতটা না তাদের শিল্পকলায় পারদর্শিতার জন্য, তার থেকেও বেশি তাদের সমাজ দর্শনের জন্য। প্রথম শিল্পী, মানে বাদীপক্ষ, যে ফোনটা করেছে, তাকে তার অনুগামী ভক্তরা অনেকেই ভগবানের আসনে বসান। তিনি বিয়েথা করেনি। বয়স ৪৫ এর কাছাকাছি। ইনি শিল্পকলায় ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ সম্মান প্রাপ্ত হয়েছেন। শিল্পের সাধনা করেন এবং সন্ন্যাস জীবন যাপন করেন। এনার বাণী এবং জীবন দর্শন ওনার শিল্পকলার থেকেও আকর্ষণীয়। তাই ভক্তরা ওনার শিল্পের থেকেও, ওনার জীবন দর্শনের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়।
অন্যদিকে প্রতিবাদী শিল্পী, মানে যিনি ফোনটা ধরেছেন, ওনার শিল্পকলার কোন পেডিগ্রি নেই। সে আবার নিজেকে বলে থাকে আমি শিল্পী গড়ার শিল্পী। ঘোড়ার ডিম কি বানায় কেউ জানে না। মুখে খালি বড় বড় ডায়লগ। তবে অনুগামী ভক্তের সংখ্যা এরও কম নয়। তার ওপরে লোকে প্রশংসা করে করে শালার লেজ মোটা করে দিয়েছে। তবে দুই শিল্পী বেজায় বন্ধু। তবে বেশ কয়েকদিন ধরেই দুজনেই বুঝতে পারছিল, সুর কোথাও বেসুরো হয়ে যাচ্ছে।
এদের ফোনালাপের একতরফা আমি শুনেছি। অন্যপক্ষ উল্টোদিকে কি বলছে বা উত্তর দিচ্ছে, সেটা আমি নিজের কানে শুনিনি। তবে গল্প লেখার রসদ পেলেই, আমার মনটা হাবলের টেলিস্কোপ হয়ে যায়। তখন কল্পনার কান দিয়ে আমি সব শুনতে পারি। যাইহোক এবার গল্পে আসি।
Illustration of a man talking over phone
ফোন বাজছে।
প্রতিবাদী শিল্পী মশাই বেজায় ব্যস্ত ছিলেন সেই সময়। প্রথমে ভেবেছিলেন ফোনটা ধরবেন না। শেষমেষ ধরবনা ধরবনা করেও ফোনটা ধরেই ফেললেন। ওপার থেকে আওয়াজ এল,
“ভাই কেমন আছিস?”
‘বল ভাই, এই চলছে। বল, তোর খবর কী?’
“আসলে একটা বিশেষ কারণে ফোন করেছিলাম।”
‘বল।’
“দেখ আমি বেশি গোল গোল করে ঘোরাবো না। একটা বন্ধুর থেকে, একজন বন্ধু হিসেবে, আরেকটা বন্ধুকে চেয়ে নিচ্ছি। দিবি?”
আলোচনা কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা ততক্ষণে প্রতিবাদী শিল্পী মশাই বিলক্ষণ বুঝেছেন। তবে ভদ্রলোক হবার অনেক জ্বালা। তাই ভদ্রলোকদের অনেক সময় বুঝেও না বোঝার ভান করতে হয়। তাই প্রতিবাদী শিল্পী মশাই বললেন, ‘ভাই জটিল করিস না। বুঝিয়ে বল।’
“তাহলে সোজা করেই বলি। মামনিকে আমি খুব ভালবেসে ফেলেছি। তুই তো জানিস। আমি বিয়ে করবনাই ঠিক করেছিলাম। তাই কখনো কোন সম্পর্কে জড়াইনি। মামনি যখন প্রথমবার আমাকে বলল, আমার বন্ধু হবে। আমি ভালোবেসে ফেলেছি। মামনিকে আমায় দিবি?”
আপনারা যারা এখনো বুঝতে পারেননি, তাদের জন্য বলে রাখি, এই মামনি ব্যক্তিটি হল, আমাদের প্রতিবাদী শিল্পীর ধর্মপত্নী। শিল্পী মশাই এমনিতে ঠান্ডা মাথার মানুষ। তার উপরে চির প্রেমিক। এককালে প্রেম যুদ্ধে ঠান্ডা মাথায় ডান্ডা অনেক চালিয়েছেন। সেসব উঠতি বয়সের হিরোবেলার গল্প। সময়ের স্রোতে জীবন পাল্টেছে। জীবন দর্শনও পাল্টেছে। তাই উনি উত্তেজনা প্রশমন করে, যতটা সম্ভব স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘তোর ভাই মাথার ঠিক নেই। অবশ্য সেজন্য তোকে দোষ দিচ্ছিনা। প্রেমে পড়লে ওরকম হয়। বিচার বুদ্ধি লোপ পায়। ভুল-ঠিক এর বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা লোপ পায়। তুই ভাই, কুল ডাউন কর। মাথা ঠান্ডা হলে পরে ফোন করিস।’
এই বলে উনি ফোন কেটে দিতে যাচ্ছিলেন। ওদিক থেকে করুন একটা স্বর ভেসে এলো।
“ফোনটা কাটিস না প্লিজ।”
প্রতিবাদী শিল্পী মশাই বিরক্ত হলেন বটে, তবে ফোনটা কাটতে পারলেন না। তাই বিরক্ত সুরে বললেন, ‘প্যান প্যান করে মাথা খারাপ করিস না। যা বলবি তাড়াতাড়ি বল।’
“তুই কিন্তু রেগে যাচ্ছিস?”
‘বেশ করেছি রেগে গেছি। তুমি শালা ফোন করে বলবে, তেরা বউ মুঝে দে দে ঠাকুর, আর আমি আনন্দে গদগদ হয়ে যাব? হয় কখনো? তোর বাপের ভাগ্য ভালো যে ভদ্রলোকের মত আচরণ করছি। নইলে রাগের বহিঃপ্রকাশে তোমার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার হয়ে যেত। বলতিস গিয়ে পুষ্পাকে, পুষ্পা ভাই তোমার বউটাকে দিয়ে দাও। কেলিয়ে তোমার ইয়ে, ভেঙে দিত।’
“এই বাপ তুলে কথা বলবি না। এখানে আমার বাপের কোনো ভূমিকা নেই। আমিও যথেষ্ট ভদ্রলোকের মতন কাজ করেছি। বাই দ্যা ওয়ে, পুষ্পা কে?”
‘তোর এই একটা দোষ। সিনেমা দেখিনা। এটা করি না। সেটা করি না। এটা করা উচিত নয়। সেটা করা উচিত নয়। মদ খাই না। সিগারেট খাইনা। গাজা খাইনা। মাগীবাজী করি না। মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক করি না। বিয়ে করি না। বিয়ে না করাকে গ্লোরিফাই করি। এদিকে কি চাই? না, মাঝবয়সী পাঠার অন্যের বউ চাই। তুই ভদ্রলোক শালা? তুই হলি ভন্ড ভদ্রলোক।’
“ও্! ভালবাসাটা অপরাধ হয়ে গেল? ভালোবাসাটা কি অপরাধ? শুধু যাকে ভালবেসেছি, সে পরস্ত্রী। ব্যাস অপরাধ হয়ে গেল? সত্যিকারের ভালবেসেছি বলেই না, চেয়ে নিচ্ছি। ওই রাজমিস্ত্রিদের মতন বউ নিয়ে পালিয়ে গেলে কি ভালো হতো? ভদ্রলোকের মতন কাজ করেছি বলেই, তার কোন দাম নেই রে। ভদ্রলোক বলেই চেয়ে নিচ্ছি। দিলে দিবি, না দিলে না দিবি। না দিলে আমি দূর থেকে ভালোবাসবো। কারো বাবা কিছু করতে পারবে না।”
‘এটাই তো সংসার না করার মুশকিল বাওয়া। তুমি গত কুড়ি বছর ধরে ছবি এঁকেছ। আমি ছবিও এঁকেছি, গানও লিখেছি, সঙ্গে চৌষট্টিটা প্রেম করে, চৌষট্টিটা কলা নিজের পিছনে গুঁজে, সংসার করেছি। সুতরাং প্রেম-ভালোবাসা আর সংসার নিয়ে আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না। এ বিষয়ে তুমি দুধের শিশু। অবশ্যই ভালোবাসা কোন অপরাধ নয়। যে কেউ যে কাউকে ভালবাসতে পারে। অপরাধ যদি হয়ে থাকে সেটা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ-এ। আর সব থেকে বড় অপরাধ হলো, বউ চাওয়াতে। শুয়োরের বাচ্চা, বউ কি প্যান্টি না জাঙ্গিয়া? যে চাইলেই দিয়ে দেব। ওরে গাধা, ওটা বউ। কোন জিনিস নয়। একটা আদ্যোপান্ত গোটা মানুষ। তার ওপরে মেয়ে মানুষ। আগে এটা শেখ, যে মেয়ে মানুষের বেচা-কেনা, দেওয়া-নেওয়া করা যায় না। কেউ করতে পারে না। আগে মেয়ে মানুষকে, মানুষ বলে ভাবতে শেখ। ভালবাসা তার অনেক পরে আসবে।’
বাদী মশাই ততক্ষণে যথেষ্ট কোণঠাসা। প্রতিবাদীর ডায়লগে একটা জোর আছে। লজিকও যথেষ্টই আছে। এখন মনে হচ্ছে বউ চাওয়াটা কেলো হয়ে গেছে। চালে ভুল হয়ে গেছে। তবে খেলাটা হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে, বাদী মশাই এবারে একটু এটাকিং মোডে চলে গেলেন। কি একটা কথা আছে না? অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স।
“না না শোন। আমি মেয়ে মানুষকে মানুষই ভাবি। তুই কথার ছলে আমাকে একেবারে নারী পাচারকারী বানিয়ে দিলে তো আর আমি মানবো না। বউ চেয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা ঠিক ওরকম নয়। তুই শব্দের কারিগর বলে আমার কথার যা খুশি মানে বার করতে পারিস না। ভালবাসায় তো কোন অপরাধ নেই। এটা একটা সময়। যে সময় ভালোবাসা হয়ে যায়।”
‘অবশ্যই অপরাধ না। ভালোবাসা চিরন্তন। অপরাধ হলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে। ভালোবাসার মাত্রায়। ভালোবাসার সীমারেখায়। ভালোবাসাকে মর্যাদা দিতে হলে, আগে ভালবাসার সীমারেখাটা নির্ধারণ করতে হয়। আর ভালবাসার সীমারেখাটা নিজের মত নির্ধারণ করা যায় না। সেই লক্ষণ রেখাটা সমাজ আগেই টেনে রেখেছে। একটা মানুষ বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার করছে। আর তুই তার ভরা সংসারে ঢুকে পড়ছিস। তারপর শালা বলছিস, ভালোবাসা। তুই তো আবার গালাগালি দিস না। আমি দি। তাই কান খুলে শুনে রাখ, বোকাচোদামোর একটা লিমিট হয়।’
“ভাই আমি কিন্তু কারো কাছে যাইনি। মামনি একজন প্রথম মহিলা, যে আমাকে বলেছিল আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে? তবুও আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, বন্ধুত্ব করতে হলে, তোর পারমিশন নিয়ে আসতে। তাও সে বারবার ফিরে এসেছে। আমার দরজায় কড়া নেড়েছে। তবেই আমি সম্পর্কে এগিয়েছি।”
‘ও! তো এগিয়ে কি বললি? চলো যাই কন্ডোম কিনতে? ওখানেই তো ভুল হয়ে গেছে বাওয়া। বন্ধুর বউ সুন্দরী। চটকদার। তুমিও চমৎকার। আরে গান্ডু মানুষ মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। বিভিন্ন কারণে। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষকে তার জীবনের কিছু বেসিক রুল ঠিক করে নিতে হয়। মনে নামতার মতন। এক এক্কে এক। দুই দুগুণে চার। এই নামতাটা চেঞ্জ করে দিস। দেখবি সব অংক চেঞ্জ হয়ে গেছে। তাই প্রতিটা মানুষকে নিজের নামতা নিজে লিখতে হয়। আর যারা নামতা লিখতে পারেনা, তাদেরকে সমাজের লিখে দেওয়ার নামতা মেনে চলতে হয়।’
“ভাই এসব বাজে কথা বলে কোন লাভ নেই। লাভ এন্ড ওয়ার, এই দুটো ক্ষেত্রে এসব জ্ঞানের কথা কোন কাজে দেয় না। সমাজের তৈরি করে দেওয়া সব নিয়মই কি আমরা মানি? তুই মানিস?”
ততক্ষণে দুপক্ষেরই সুর সপ্তমে চড়ে গেছে। ক্যাজরা ভালো রকম জমে গেছে। আমার হেব্বি ইন্টারেস্ট। আমি তখন শুনছি, মস্তি নিচ্ছি, আর খাতায় নোট নিচ্ছি, গল্প লিখতে হবে বলে। প্রতিবাদী বন্ধু এবারে ঝাঁঝিয়ে উঠলো;
‘না মানি না। আর সেই জন্য নিজের একটা রুল বুক বানিয়েছি। আর সেই রুল বুকে লেখা আছে, কোন ধরনের মানুষের সাথে কি ধরনের সম্পর্ক তৈরি করব। আমি আমার নিজের মেয়েকেও ভালোবাসি, বউকে ভালবাসি, বন্ধুর মেয়েকে ভালোবাসি, পাতানো বোন কেও ভালোবাসি, আবার মাকেও ভালোবাসি, আবার ভাতৃবধূ কেও ভালোবাসি। কিন্তু প্রত্যেকটা ভালোবাসার মাত্রা আলাদা। এখন আমি সুবক্তা। সুদর্শন। যাকে বলে ক্যারিশম্যাটিক। তাই কখনো যদি বন্ধুপত্নী, আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়, আমি আমার রুল বুকের শরণাপন্ন হই। যদি দেখি বন্ধুপত্নীর আমার প্রতি আকর্ষণ অন্য মাত্রায়, আর সেটা আমার রুল বুকের বাইরে, তখন আমি খেলতেই নামব না।’
“আমিও তাই। সেই জন্যই তো চেয়ে নিচ্ছি। দিলে দিবি। না দিলে না দিবি।”
‘ওখানেই তো প্রবলেম। তুই তো তোর দাদার বউকে, দাদার মেয়ে-কে খুব ভালবাসিস। কি বাসিস না?’
“সেটা তো অন্য কথা।”
‘না না অন্য কথা নয়। সোজা কথার উত্তর দে। তোর দাদার বউকে আর দাদার মেয়ে কে তুই ভালবাসিস কি বাসিস না?’
“হ্যাঁ বাসি।”
‘ইয়েস। ইয়েস। ইয়েস। এটাই শুনতে চাইছিলাম। তো দাদার কাছে গিয়ে বৌদিকে চেয়ে নে। গিয়ে বল ভালোবাসতেই পারি। ভালোবাসার অধিকার আছে। দাদা কে গিয়ে বল তুই তো অনেকদিন ঘর করলি, এবার তোর বউটাকে আমায় দে।’
“না তা কেন! সেটা তো অন্যরকম সম্পর্ক।”
‘আরে শালা। নিজের দাদার বেলায় অন্য রকম সম্পর্ক। আর বন্ধুর বেলায়, আমাকে তোমার বউ দাও? নষ্টামোর তো একটা লিমিট হয়।’
“এতে নষ্টামোর কি দেখলি? এত যে সমাজ সমাজ করে লেকচার দিচ্ছিস, তোর সমাজেরই বানিয়ে দেওয়া নিয়ম, দেয়ার ইজ নো নিয়ম ইন লাভ এন্ড ওয়ার। আর দশজন যা বলে সব সময় তাই ঠিক হয় নাকি? এই যদি মামনি আমার সাথে থাকতে চায়। আমার সাথে বেরিয়ে আসতে চায়, তুই আটকাতে পারবি? কি বলে তোর সমাজ? একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে আটকে রাখা যায়?”
‘আরে পাগল, ইসমে তেরা ঘাটা মেরা কুছ নেহি যাতা। ভাগ্যবানের বউ চলে যায় শুনিস নি? এইযে ধর গত এক মাসে আমি চল্লিশটা গান লিখেছি। পাঁচটা এক্সিবিশন করেছি। তুই কি করেছিস? তুই সারা জীবন রাত দশটায় ঘুমিয়ে ভোর পাঁচটায় উঠেছিস। ঘুম থেকে উঠেই চলে গেছিস স্টুডিওতে। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু সাধনা। শিল্প সাধনা। কিন্তু গত একমাসে? ভেবে দেখ, তুই শিল্প ছাড়া সব করেছিস। রাত জেগে আমার বউকে মেসেজ করেছিস। আমি যখন কাজে ব্যস্ত থেকেছি, তুই অকাজ করেছিস। ধরে নে আমার বউ তোর সাথে চলেই গেল। তারপর? আমার জীবনে তো শান্তিই শান্তি। একেবারে নিস্তরঙ্গ। এদিকে আমার প্রডাক্টিভিটি বেড়ে যাবে। আর ওদিকে, তুই তখন বাজারে গিয়ে সবুজ কানকোওয়ালা পুঁটি মাছ খুজবি। এখন কেউ যদি ইয়েতে ঢুকে যেতে চায়, যাক না। আমার কি। তুই শুধু দয়া করে আমায় ফোন করে বিরক্ত করিস না। আর তোর প্রশ্নের উত্তরটা আমার রুল বুকে লেখা আছে।
আমার রুল বুকের ধারা ৭৫৪; আমার মেয়ে তার জীবন সঙ্গী অথবা সঙ্গিনী হিসেবে কাকে পছন্দ করবে সে তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। সে বিষয়ে আমার উপদেশ কেবলমাত্র অনুরোধ সাপেক্ষ। মানে জিজ্ঞাসা করলে তবেই কোনো উপদেশ দিতে যাব।
ধারা ৭৫৫; আমার মেয়ে বিবাহ পরবর্তী জীবনে, কখনো যদি আমাকে এসে বলে, সে তার বর্তমান স্বামীর সঙ্গে সুখী নয়। এবং তার বিচার বুদ্ধি বিবেচনা অনুযায়ী সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে সে তার বর্তমান বৈবাহিক সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করবে। আমার কূটনৈতিক সমর্থন সর্বদা আমার মেয়ের প্রতি থাকবে। কারণ, অন্যথায় আমাকে মেনে নিতে হয় যে আমি তাকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারিনি। সেটা প্রকারান্তে আমার নিজেরই ব্যর্থতা।
ওদিকে আমার রুল বুকের ধারা ৯৯৯-এ লেখা আছে,
অনুরূপ পরিস্থিতিতে পরিবারের দুই সদস্যের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না।
সুতরাং আমার বউ যদি এসে আমাকে বলে, সে আমার সাথে আর থাকতে চায় না। সে চলে যেতে চায়। তাহলে আমার কুটনৈতিক সমর্থন সর্বদা তার পক্ষেই থাকবে। আমি ধরে নেবো সে তার জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তাতে তুই ভাবিস না তোর কোন উপকার হবে। ওইযে প্রথমেই বললাম, ইসমে তেরা ঘাটা, মেরা কুছ নেহি যাতা।
এরপরে আর ফোনালাপ খুব বেশিক্ষণ চলেনি। কাণ্ডকারখানা শুনে সেদিন হাসতে হাসতে আমার পেটে যথেষ্ট ব্যথা হয়ে গেছিল। বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা অবশ্য। লিখব লিখব করে গল্পটাই লেখা হচ্ছিল না। ভাবলাম আন্তর্জাতিক নারী দিবসেই লেখাটা শেষ করে পোস্ট করি।

Copyright © Jewel Chanda

Author

  • জুয়েল চন্দ

    Advocate Jewel Chanda is an accomplished legal professional with over 15 years' experience in the legal field. He has served as a Judge for 10 years in the West Bengal Judiciary and is currently practicing before the High Court at Calcutta and in various Trial Courts of the District Judiciary. A Gold Medalist, Mr. Chanda holds two Bachelor's degrees, one of which is Law, along with four Master's degrees in Law (Criminology), Business Law, Environment & Development and Sociology. He is also a Doctoral Research Scholar of Jindal Global Law School whose research area focuses on Artificial Intelligence and Law. With exceptional expertise in both civil and criminal litigations including family matters and property matters, Advocate Chanda is highly trained to handle trials, appeals and revisions. He is well-versed in all aspects of the law and litigation, making him an invaluable asset to protect the legal rights of the poor and weaker section of the society. Contact Advocate Chanda at jewelchanda@gmail.com

    View all posts

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore